বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের কাছে আগামী দিনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পাশাপাশি নতুন জোটের লক্ষ্য, উদ্দেশ্যের কথা জানিয়েছেন বিএনপি ও নবগঠিত ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হলে পরবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা জানতে চেয়েছেন কূটনীতিকরা।
এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে কে থাকবে আর বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে থাকাবস্থায় দলটি নির্বাচনে যাবে কি না তাও জানতে চেয়েছেন কূটনীতিকরা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানের স্থানীয় এক হোটেলে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পর জোটের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে কূটনীতিকদের প্রশ্নের উত্তরে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা কামাল হোসেন।
জানা যায়, প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকের ঐক্যফ্রন্টের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন কূটনীতিকরা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, কূটনীতিকরা খুব উৎসাহী। তারা সবাই দেখতে চায় বাংলাদেশে সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন, সুষ্ঠু নির্বাচন।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য তুলে ধরেন। এসময় কূটনীতিকরা ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। কামাল হোসেন তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
জানা গেছে, ঐক্যফ্রন্টের কাছে কূটনীতিকদের প্রধান প্রশ্ন ছিল, তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে পারলে তাদের সরকারেরও প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?
উত্তরে কামাল বলেন, আমাদের দেশে সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। আমরা ক্ষমতায় এলেও সেভাবেই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার দেওয়া হবে কাউকে।
নতুন এই ফ্রন্টের জোটের মূল নেতার বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল বলেন, এখানে কোনো একক নেতৃত্ব নেই। যৌথভাবেই এই জোট পরিচালিত হচ্ছে।
এ সময় কূটনীতিকরা বিএনপি জোটে জামায়াত থাকা এবং বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের অবস্থানের বিষয়েও জানতে চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল কূটনীতিকদের বলেন, দেশে বর্তমানে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তারা অবশ্যই নির্বাচনে যাবেন।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, আমরা বিদেশিদের সঙ্গে ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। এসব দাবি আমরা তাদের কাছে তুলে ধরেছি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, আমাদের দাবি ও লক্ষ্য তাদের কাছে তুলে ধরেছি। আশা করি ভালো ফিডব্যাক পাব।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, কাতার, অস্ট্রেলিয়া, চীন, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৩০টি দেশের কূটনীতিকরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম অংশীদার বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, আব্দুল মান্নান, জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ অন্যরা।
অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ প্রমুখ বৈঠকে ছিলেন।