আফগানিস্তানে চলতি বছরের ভয়াবহ খরায় বিপুল সংখ্যক মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এ সংখ্যা সরকারি বাহিনী ও তালেবান বিদ্রোহীদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষে ঘরছাড়াদের তুলনায় বেশি। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতের আশপাশের উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে খরায় বিপর্যস্ত অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলেও জানিয়েছে বিবিসি।
এ বছরের ভয়াবহ খরায় উত্তর ও পশ্চিম আফগানিস্তানে সাদির মতো প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিতে এমন এক সময়ে এ ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানল, যখন এর জনগণ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে নানামুখী সংঘাতে বিপর্যস্ত।
জরুরি প্রয়োজনে নির্মাণ করা এমনই একটি উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেয়া ৭০ বছর বয়সী সাদি মোহাম্মদ বলেন, আমরা তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত। বাড়ি ছাড়ার সময় অল্প কিছু জিনিস সঙ্গে নিতে পেরেছিলাম, সেগুলোর বেশির ভাগই পথে হারিয়েছি। এখন কিছুই নেই আমাদের। আমরা আট জন এই ছোট তাঁবুতেই থাকছি। স্ত্রী ও ভাই মারা গেছে। আমাদের সন্তানদের অর্ধেক এখানে, বাকিদের পেছনে ফেলে এসেছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাহিনী দেশটিতে অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি টানার পর থেকে দেশটিতে সংঘর্ষের পরিমাণ আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ২০০১ সালে মার্কিন বাহিনীর অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে চলতি সময়েই তালেবানরা আফগানিস্তানের সবচেয়ে বেশি অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। সশস্ত্র এ গোষ্ঠীটির সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনায় এ বছর যত মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে, খরা তারচেয়েও বেশি মানুষকে উদ্বাস্তু করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। হেরাতে বৈশ্বিক এ সংস্থাটির খাদ্য কর্মসূচির (ইউএনএফপিএ) সমন্বয়ে সহায়তা করা কাদির আসেমিও খরায় ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে আসা মানুষের জোয়ার বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। দুর্যোগের মাত্রার কারণে এটা (খাদ্য সহায়তা) খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে- বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
খাবার কেনার জন্য ইউএনএফপি এখন ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ দিচ্ছে। উদ্বাস্তু শিবিরের বাইরের নিবন্ধন কেন্দ্রে আসা আফগানদের মধ্যেও দেখা গেছে মরিয়া ভাব। উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ ফারিয়াব থেকে চার শিশু সন্তানকে নিয়ে উদ্বাস্তুশিবিরে আসা এক নারী জানান, দুর্ভাগ্যই তাদের এখানে টেনে এনেছে।
খরায় বিপর্যস্ত প্রায় ২২ লাখ মানুষের জন্য জাতিসংঘ এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে বলে খবরে প্রকাশ।