আজকের মহাসমাবেশে এরশাদের টার্গেট বড় শোডাউন

ডেস্ক রিপোর্ট

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শনিবার সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের মহাসমাবেশ। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৩টার আগেই শেষ হবে কর্মসূচি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নির্দিষ্ট জায়গায় মহাসমাবেশের বিশাল মঞ্চও ইতিমধ্যে প্রস্তুত। মহাসমাবেশের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট।

জানা গেছে, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মিলিত জাতীয় জোটের মহাসমাবেশ হলেও মূলত নির্বাচনের আগে এটি জাতীয় পার্টি ও দলটির চেয়ারম্যান এরশাদেরই বড় ধরণের শোডাউন কর্মসূচি। কর্মসূচি সফল করতে অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে এবার বেশি টাকা খরচ করেছেন তিনি। মহাসমাবেশের মঞ্চ প্রস্তুত, প্রচার-প্রচারণা, সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে আসাসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। ৫ কোটি টাকার এই মহাসমাবেশে ৩ লাখ লোক সমাগম ঘটানোর টার্গেট। মহাসমাবেশের জন্য গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে বলে জোটের নীতি নির্ধারনী সূত্রে জানা গেছে।

বড় শোডাউনই এরশাদের উদ্দেশ্য :
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বড় ধরণের শোডাউনের উদ্দেশ্য ছাড়া এরশাদের জোটের এই মহাসমাবেশে তেমন কোন চমক নেই। যদিও দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বলেছেন, মহাসমাবেশে চমক রয়েছে। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন। মূলত মহাসমাবেশে জোটের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রস্তুতির নির্দেশই দেবেন তিনি। এই বার্তা নিয়েই তারা এলাকায় ফিরে যাবেন।

জোটের নেতারা জানিয়েছেন, সম্মিলিত জাতীয় জোটের মহাসমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনের আগে এরশাদ বড় ধরণের শোডাউনের চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার জোটের শক্তি প্রদর্শন করতে চান তিনি। যাতে যে কোন রাজনৈতিক তৎপরতায় তাকে হিসাবে আনা হয়। বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রগুলো বুঝতে পারে বিরোধী দল হিসেবে বাংলাদেশে জাতীয় পার্টি জোটের শক্তি কোনো অংশে কম নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে বড় ধরণের শোডাউন করে এরশাদ নির্বাচনী মাঠে নতুন করে আলোচনায় আসতে চান। তিনি মনে করেন, মহাসমাবেশে শোডাউন করা গেলে জনগণের কাছে লাঙলের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে বিএনপি জোট কিংবা বিএনপিসহ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে আসলে মহাজোটে আসন নিয়ে ভাল দরকষাকষি করাও যাবে। আর যদি বিএনপি না আসে তাহলে সারা দেশে অনেক যোগ্য ও বিত্তশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী আছে তাদের দলে ভেড়ানো যাবে। জীবনের শেষ বয়সে এসে সবধরণের নির্বাচনী কৌশল বাস্তবায়ন করার অভিপ্রায় নিয়ে বড় ধরনের শোডাউনের আশায় এরশাদ তার জোটের ব্যানারে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই মহাসমাবেশ ডেকেছেন।

মহাসমাবেশে দেশবাসীর জন্য নতুন কোন বার্তা আছে কি-না জানতে চাইলে দলের কো চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন মন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, মহাসমাবেশে কি বার্তা দেবেন তা একমাত্র পার্টির চেয়ারম্যানই জানেন। তবে এই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের আগে আমাদের জাতীয় পার্টি, দলের চেয়ারম্যান ও তার নেতৃত্বাধীন জোট নিয়ে দেশবাসীর মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য জোটের ব্যানারে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া। সেই ম্যাসেজটা হয়তো জাতীয় পার্টি ও শরিক দলের নেতাকর্মীরা পাবেন।

তিনি আরও বলেন, মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা শোডাউন করবো। তৃণমুলে আমাদের যে শক্তি সেটার জানান দেওয়া হবে। মানুষ দেখবে আমরা রাজনৈতিক দল হিসাবে অনেক শক্তিশালী। যাতে তারা আমাদের নির্ভরযোগ্য মনে করে আগামী নির্বাচনে ভোট দেয়।

জাতীয় পার্টি নিজেদের জোটে নাকি মহাজোটে নির্বাচন করবে জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান পরিস্কার করে বলেছেন, বিএনপিসহ সবাই নির্বাচনে আসলে আমরা মহাজোটে নির্বাচন করব, না হলে সম্মিলিত জোটের ব্যানারে তিনশ আসনে অংশ নেব।

জানা গেছে, মহাসমাবেশে বড় ধরণের শোডাউন করতে নেতাদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। বর্তমান এমপি ও মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাইকে সর্বোচ্চ লোকজন নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। তাই লোকসমাগম করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন জাপা নেতারা। প্রত্যেক অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠন পৃথক মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেবে।

দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, মহাসমাবেশে ঢাকা নগরী থেকে অর্ধ লক্ষাধিক নেতাকর্মী যোগ দেবেন। জাতীয় পার্টি ও জোটের শরিক দলগুলো সর্বশক্তি দিয়ে এই মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত করবে। এখান থেকে জাতীয় পার্টির জোটের নতুন যাত্রা সূচিত হবে।

৫০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে আসবে ইসলামী ফ্রন্ট :
সম্মিলিত জাতীয় জোটের মহাসমাবেশে লোকসমাগমের টার্গেট পুরণে এরশাদের দল জাতীয় পার্টির উপর পড়লেও জোটের শরিক দল ইসলামী ফ্রন্ট ৫০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে আসবে। ইতিমধ্যে তাদের অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় চলে এসেছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে কমপক্ষে ২০ হাজার নেতাকর্মী বাস, ট্রেন, লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জেলা থেকে বাকী নেতাকর্মীরা যোগ দেবে মহাসমাবেশে। ইসলামী ফ্রন্ট ছাড়াও খেলাফত মজলিস, ইসলামী মহাজোট, বিএনএ’র দলগুলো তাদের নেতাকর্মী নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দেবে।

মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে দলের মহাসচিব এম এম মতিন বলেন, মহাসমাবেশ সফল করতে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। সারাদেশ থেকে আমাদের ৫০ হাজার নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেবেন। নেতাকর্মীদের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের স্বতন্ত্র শক্তি দেখতে পাবে দেশবাসী।

মহাসমাবেশ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নতুন সাজে সজ্জিত। জোটের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের, দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, শরিক দলের নেতা ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মান্নান, মহাসচিব এম এ মতিন, ইসলামী মহাজোটের চেয়ারম্যান আবু নাছের ওয়াহিদ ফারুকসহ নেতাদের বড় বড় পোস্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ মোড়, মৎসভবন ও আশপাশ এলাকা। মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের পোস্টার ব্যানারও বাদ পড়েনি শোডাউন থেকে।

মহাসমাবেশের সর্বশেষ প্রস্তুতি দেখতে গতকাল দুদফা মাঠে যান দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের ঢাকা মহাপনগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, সাহিদুর রহমান টেপা, এসএম ফয়সল চিশতী, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, দক্ষিণের সেক্রেটারি জহিরুল আলম রুবেল, ইকবাল হোসেন রাজু, জহিরুল ইসলাম জহির, আরিফ খানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

অন্যদিকে গতরাতে মাঠ দেখতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান জোটের শরিক ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এম এ মতিন, যুগ্ম মহাসচিব সওম আব্দুস সামাদ, এম এম মোমেন, ফিরোজ আলম, আব্দুল মতিন, মুহাম্মদ আব্দুল হাকিমসহ নেতারা।

মহাসমাবেশের মঞ্চের সার্বিক নিরাপত্তায় থাকবে ইসলামী ফ্রন্টের প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক টিম। দেড়শ জনের এই টিম নিরাপত্তা বলয় দিয়ে জোটের চেয়ারম্যান এরশাদসহ উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মঞ্চে নিয়ে আসবেন। সকাল ১০টার মধ্যে মহাসমাবেশে যোগ দেবেন এরশাদ, রওশন এরশাদসহ জোটের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে