আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমানের ৯০তম জন্মদিন আজ। দিবসটি উপলক্ষে বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি, নিবেদিত কবিতা পাঠ।
শামসুর রাহমান একাধারে কবি, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, উপন্যাসিক, কলামিস্ট, অনুবাদক ও গীতিকার। পঞ্চাশ দশক থেকে শুরু করে একাধারে প্রায় ছয় দশকেরও বেশি সময় তিনি বিরতিহীনভাবে সাহিত্য-সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতিক্ষেত্রে কাজ করেন। তাকে বাংলা সাহিত্যে ‘স্বাধীনতার কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
কবিতায় তিনি স্বাধীনতার মানসে ব্যাপক কাজ করেন। মৌলবাদ, ধর্মান্ধতাবিরোধী বিষয়েও স্বাক্ষর রাখেন তিনি। তার মধ্যে ছিল প্রেম, দ্রোহ ও বিশ্বজনীনতা, যা আজও সব বয়সের মানুষকে উজ্জীবিত করে। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা কবির অসংখ্য কবিতা সর্বস্তরের মানুষকে উৎসাহিত করে আসছে।
শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলিতে নিজ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক ভিটা নরসিংদীর পাহাতলী গ্রামে। তিনি ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।
ঢাকা কলেজে অধ্যয়নকালে ১৮ বছর বয়সে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তার প্রথম কবিতা প্রকাশ পায় ‘সাপ্তাহিক সোনার বাংলা’ পত্রিকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করার পর কবি ১৯৫৭ সালে ডেইলি মর্নিং সান পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদক হিসেবে কর্ম ও পেশাগত জীবন শুরু করেন। পরে পাকিস্তান রেডিও’তে দেড় বছর চাকরি করেন। দেশ স্বাধীনের পর ‘দৈনিক বাংলা’ পত্রিকায় যোগ দেন। এক পর্যায়ে এই পত্রিকার প্রধান সম্পাদকসহ ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’র সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে ‘মূলধারা’, ‘অধুনা’ নামে দু’টি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
কবির প্রথম কাব্য ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশ পায় ১৯৬০ সালে। দ্বিতীয় কাব্য ‘রুদ্র করোটি’তে (১৯৬৩ ) এবং পরবর্তীকালে ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’ (১৯৬৭), ‘নিরালোকে দিব্যরত’ (১৯৬৮), ‘নিজ বাসভূমে’ ( ১৯৭০), ‘বন্দি শিবির থেকে’সহ (১৯৭২) তার প্রকাশিত কাব্য ৪৮টি, ১০টি কাব্য সমগ্র, চারটি উপন্যাস, দুইটি গল্প সমগ্র, দুইটি কলাম, পাঁচটি অনুবাদ কবিতা, দুইটি অনুবাদ নাটক, একটি জীবনী, ১০টি শিশুতোষ গ্রন্থসহ মোট ৯৮টি বই প্রকাশ পায়। আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাদীনতা দিবস পদক, ভারতের আনন্দ পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করেন তিনি।