গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন সিলেটের সমাবেশে বলেন, আমরা ৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। সংবিধানের ৭নং অনুচ্ছেদে রয়েছে জনগণ দেশের মালিক নেই। কিন্তু বর্তমানে জনগণের সেই মালিকানা নেই। এটা আদায় করে নিতে হবে। আমাদের ১ নম্বর দাবি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর সঙ্গে আরও ৬টি দাবি রয়েছে। এসব দাবির কথা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে হবে।
আজ বুধবার সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, ৭ দফাকে হালকাভাবে নেবেন না। এটা অনেক মূল্যবান। এটা জনগণের হারিয়ে ফেলা অধিকার, দেশের মালিকানা ফিরিয়ে আনার দাবি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, জনগণ ক্ষমতার মালিক হবে। সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের মুষ্ঠিমেয় মানুষের উন্নয়নে উন্নয়ন হয় না। আমরা চাই, ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়ন। আমরা ইনশাআল্লাহ বিজয়ী হব। আমাদের বিজয় অনিবার্য।
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সিলেটবাসী অনেক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন। আজ আরেকটি ইতিহাসের জন্ম দিচ্ছেন। এই ইতিহাস হচ্ছে গণতন্ত্র মুক্তির ইতিহাস।
তিনি বলেন, আজ থেকে নতুন লড়াইয়ের শুরু হলো। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের অধিকার। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। ইভিএম দেয়া চলবে না। ডিজিটাল চুরি করতে দেয়া হবে না। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার চোরের মতো, ডাকাতের মতো ভোট ডাকাতি করছে। সিলেটের মানুষ সাহস দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী করেছে। আজ আমাদের শপথ নেয়ার সময়, সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। তিনি উপস্থিত জনতার কাছে প্রশ্ন রাখেন, ভোট যদি হয়, আমরা জিততে পারবো? এ সময় উপস্থিত জনতা ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দেন।
মান্না বলেন, গত বছর নির্বাচনের সময় ঘরে ছিলেন। এবার কোটি কোটি মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন জেলে। তিনি নানা রোগে আক্রান্ত। ৭৩ বছর বয়সে তার জেল খাটার কথা না। দেশে কোটি কোটি টাকার লুটপাট হয়েছে। বিচার হয়নি। আমরা সবাই বলছি, তার (খালেদা) মুক্তি চাই। আমরা শপথ নেই, কিভাবে বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারি। খালেদা জিয়ার সঙ্গে ডাক্তারও দেখা করতে পারে না বলে অভিযোগ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না।
মান্না আরও বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আমাদের সঙ্গে কথা বলুন। সিলেটের জনসভা সারাদেশে মানুষের জন্য একটি সিগন্যাল। আমরা বাঁচার অধিকার চাই, সুন্দর দেশের অধিকার চাই। সারাদেশের মানুষ একদিকে, অন্যদিকে শেখ হাসিনার সরকার একা থাকবে। আমরা লড়াই করব।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করা হবে। তাদেরকে সমঝোতায় আসতে হবে। যদি সমঝোতায় না আসেন, তবে বুঝতে হবে দেশে গণতন্ত্র চান না। মানুষ এর উপযুক্ত জবাব দেবে।
মওদুদ বলেন, ঘুষ ও দুর্নীতি ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে। এগুলোর বিচার করতে হবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে পাই পাই করে হিসাব নেব। তারা ক্ষমতায় এসে বিদেশে সম্পত্তি করেছে। তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা যে সাত দফা দিয়েছি, তার যাত্রা শুরু করব পবিত্র শহর হযরত শাহজালাল ও হযরত শাহপরানের পুণ্যভূমি সিলেট থেকে।
তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীসহ শত শত ব্যক্তিকে গুম করেছে। তার জবাব দিতে হবে। সব লুটপাটের জবাব দিতে হবে। এ জন্য তারা (সরকার) ভয় পায়।
মোশাররফ বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগেই তাকে মুক্তি দিতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। পূণ্যভুমি সিলেট থেকে আন্দোলন শুরু হলো।
সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, যারা গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী, শান্তি, কল্যাণ ও উন্নয়নের কল্যাণে প্রীতিময় পরিবেশে দেশের স্বার্থরক্ষার প্রচেষ্টায় সবাই আজকের সমাবেশে জড়ো হবেন।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, ডাকস ভিপি, বর্তমান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, ইলিয়াস আলী ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। এমসি কলেজে থাকাকালে তিনি আমার অধীনে রাজনীতি করতেন। তিনি ঢাকায় গিয়ে ছাত্রদলে যোগ দেন।
তিনি বলেন, সিলেটের মানুষ কোনোদিন মাথা নত করে হাঁটে না, মাথা উঁচু করেই হাঁটে। যতো দিন বাঁচব, জনগণের দাবিতে থাকব।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার বক্তব্যে বলেন, দেশের মানুষ মুক্তি চায়। ইলিয়াস আলীসহ সকল নেতাকর্মীকে ফিরে পেতে চায়। দেশের জনগণ কখনো পরাজিত হয় না। বক্তব্যের এক পর্যায়ে গয়েশ্বর সমাবেশের সভাপতি ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ‘খুলনার গণমানুষের মেয়র’ বলে সম্বোধন করেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বক্তব্যের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি সিলেটে কর্ণেল এম এ জি ওসমানীকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, এই মহান নেতার মূল্যায়ন এখন কেউ করে না। আমি এই সমাবেশ থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, উন্নয়নের জোয়ারে নৌকা টালমাটাল, ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘অন্যায়ভাবে’ কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, দেশে আইনের সংস্কার প্রয়োজন।
জাফরুল্লাহ বলেন, আমরা যদি বিজয়ী হই, আপনারা যদি সমর্থন করেন, তবে তিন মাসের মধ্যে দেখবেন দেশে ওষুধের দাম অর্ধেক হয়ে গেছে, চিকিৎসা খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমাদের আশা লাখো লোকের ঢল নামবে আজকের সমাবেশে। সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আমাদের যাত্রা শুভ হবে। সিলেটসহ সারা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দিকে তাকিয়ে।