ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে কথিত ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে পরিচিত ১১ জন নেতা সব বিভেদ ভুলে ফের বিএনপিতে ফিরলেন। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার এক বৈঠকের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এক সময়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এসব নেতাদের সক্রিয় হতে নির্দেশনা দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ১১ জন। তারা হলেন— বগুড়ার গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (জিএম সিরাজ), ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, জয়পুরহাটের আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান, নওগাঁর আলমগীর কবীর, নরসিংদীর সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, সুনামগঞ্জের নজির হোসেন, নারায়ণগঞ্জের আতাউর রহমান আঙুর, রাজশাহীর আবু হেনা, পটুয়াখালীর শহীদুল আলম তালুকদার, ঝালকাঠির ইলেন ভুট্টো ও বরিশালের জহির উদ্দিন স্বপন।
এছাড়া আরও ৩ জনের দলে ফেরার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই তিনজন হলেন— গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শামীম কায়সার লিংকন, যশোরের মফিকুল হাসান তৃপ্তি ও ঢাকার মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম। এদের মধ্যে মফিকুল হাসান তৃপ্তি আইনি জটিলতা এবং মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম ও শামীম কায়সার লিংকন দেশের বাইরে থাকায় বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
তাদের দলে ফিরিয়ে নিয়ে আসার বিষয়ে বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক জানান, দীর্ঘসময় এই নেতারা দলের পদ-পদবীর বাইরে থাকলেও দলছুট হননি। ২০১৪ কিংবা তারও পরে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে দলের বিরুদ্ধে যাননি। তবে তাদের মনোনয়নের বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা না দেওয়ার শর্তে দলে ফেরানো হয়েছে। এমনকি যারা অতীতের কর্মকাণ্ডের জন্য ভুল স্বীকার করে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে আবেদন করেছেন তাদেরকেই শুধু দলে ফেরানো হচ্ছে বলেও জানান ওই নীতিনির্ধারক।
বৈঠক শেষে সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেই সম্পৃক্ত ছিলেন। এখন দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দলের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ ধরনের বৈঠক তাদের মধ্যে সবসময় হয়ে থাকে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে ব্যাপারে অবহিত হয়েছেন। দলের নির্দেশ মোতাবেক তারা কাজ করবেন। তারা দলে আছেন, ছিলেন, থাকবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কারপন্থি হিসেবে কোনো বৈঠক হয়নি। দলের লোক হিসেবে সভা হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনোনয়ন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। অনেক প্রার্থী আছে।
এদিকে দলের সহ-সফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। যার অংশ হিসেবে দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন মহাসচিব। বৈঠকে চলমান জাতীয় সংকট, খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ সকল নির্যাতিত নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার এবং জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব কালবিলম্ব না করে সকলকে পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় হয়ে দলকে শক্তিশালী করার এবং সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান।
পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুযায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ ধরনের বৈঠক অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।