পরিস্থিতি বুঝে এগুচ্ছে জামায়াত : বিবিসিকে দলের সেক্রেটারি জেনারেল

ডেস্ক রিপোর্ট

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর গত প্রায় ১০ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে দলের শীর্ষনেতাদের ফাঁসি ও দলের নিবন্ধন বাতিলসহ নানা ইস্যুতে দলটি দৃশ্যত বিপর্যস্ত। এ নিয়ে জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমানের বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।

হাইকোর্টের রায়ের কারণে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক না থাকায় আসন্ন নির্বাচনকে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা কী? এমন প্রশ্নে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান বলেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলেই জামায়াতের ভূমিকা দৃশ্যমান হবে – তখন আর কোনো ‘অদৃশ্য ভূমিকা’ জামায়াতের থাকবে না।

জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, নির্বাচন কতদূর হচ্ছে সেইটা নিয়েই তো কথা। যদি বিগত সিটি কর্পোরশনের মতো নির্বাচন হয়, সেটাতো কোনো নির্বাচন নয়। যদি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন হয় সেটা কে তো আর নির্বাচন বলা যায় না। যদি সুষ্ঠু ইলেকশন হয়, জামায়াতের ভূমিকা আপনার দৃশ্যমান দেখতে পারবেন। কোনো অদৃশ্য ভূমিকা জামায়াতের থাকবে না।

নানা বাধাবিপত্তির পরও জামায়াত দুর্বল নয় উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা হারিয়ে যাইনি। সময়ের ক্যালকুলেশন করেই আমরা আগাচ্ছি। যখন যা প্রয়োজন তাই করছি। প্রকাশ্য বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমাদের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করছেন। আমাদের নিয়মিত দলীয় কার্যক্রম আমরা চালাচ্ছি। আমাদের বক্তব্য-বিবৃতি নিয়মিত আছে।

দলীয় নিবন্ধন এবং প্রতীক ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশাও করছেন জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় এ নেতা। দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেন, আমরা নিবন্ধন পেতে আপিল করেছি। আমরা যদি ন্যায়বিচার পাই, তাহলে আশা করি অবশ্যই আমরা নিবন্ধন ফিরে পাবো। নিবন্ধন যদি পাই প্রতীকও আমরা ফিরে পাবো। যদি প্রতীক এবং নিবন্ধন কোনোটাই ফিরে না পেলেও জামায়াত সক্রিয়ভাবে এবং প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় থাকবে ইনশাআল্লাহ।

২০ দলীয় জোটের সঙ্গে বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই দলটি নির্বাচন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাবে বলে জানান তিনি।

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রণ্ট নামে গঠিত সরকারবিরোধী জোটে না থাকলেও এতে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে জামায়াত। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে জামায়াতও একই আদলে ৮দফা দাবি তুলে ধরেছে।

জামায়াত সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত ও দুর্বল হয়েছে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের নেতৃত্বের প্রতিটি ইউনিট থেকে শুরু করে আমির পর্যন্ত নির্বাচিত হন। যাদেরকে আমরা হারিয়েছি তা তো অবশ্যই জামায়াতের জন্য একটা বিরাট ক্ষতি। কিন্তু পদ্ধতির কারণেই জামায়াত ওই রকম কোনো ক্ষতির মুখে পড়ে নাই।

ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সহিংসতার আশঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, কোনো ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য প্রয়োজন হলে তো আমরা অবশ্যই রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবো। কিন্তু আমাদের কর্মসূচীর পদ্ধতি হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সরকার থেকে সেটা রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক যদি আমাদের অধিকারের ওপরে আঘাত দেয়া হয় তাহলে আত্মরক্ষার চেষ্টাতো সবারই করার অধিকার সেটাতো করবেই। কিন্তু আমরা নিজের থেকে কোনো ভায়োলেন্সে যাব না।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতের নেতৃত্ব কী রকম রাজনৈতিক ভিশন নিয়ে আগাচ্ছে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এখনই জামায়াতে ইসলামীকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নেয়ার স্বপ্ন দেখি না। কিন্তু নির্যাতিত মানবতা মুক্তি পাক – সেই স্বপ্ন আমরা দেখি। আপনি বলবেন, দল ক্ষমতায় না গেলে সেটা কিভাবে হবে? সেটা দল এককভাবে হতে পারে, জোটের রাজনীতির ভিত্তিতে হতে পারে। এমনকি আওয়ামী লীগও যদি তার আদর্শ হিসেবে কোরান সুন্নাহকে ইসলামের কল্যাণকর দিককে গ্রহণ করে। আমরাতো তাদের প্রতিপক্ষ হবো না।

এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, অবশ্যই ক্ষমতার আমাদের ভিশন আছে। কিন্তু সেটা আমরা মনে করি যে অর্জন করার জন্য বেশকিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। সেই প্রস্তুতিতেই আমরা আছি।

বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতি নিয়ে জামায়াতের অভিমত জানতে চাইলে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আপনি জানতে চাইছেন যে আমাদের টাইমলাইন সামনে আছে কিনা। আছে। সিকি শতাব্দীর ভিতরেই এখানে (বাংলাদেশে) বড় ধরনের একটা পরিবর্তন হবে ইনশাআল্লাহ। আবার এত সময় নাও লাগতে পারে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে