মান-অভিমানে নিষ্ফ্ক্রিয়, বহিস্কৃত, পদবঞ্চিত ও দলে কোণঠাসা বিএনপি নেতাকর্মীদের টার্গেট করেছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ। তাদের দলে নেওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা। একই সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মীদেরও নিজেদের পক্ষে টানার পরিকল্পনা করছেন দলটির নেতারা।
সম্প্রতি বিএনপির রাজনীতি থেকে ইস্তফা দেওয়া সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সমশের মবিন চৌধুরীসহ এরশাদ আমলের প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন ও নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বিকল্পধারায় যোগ দিয়েছেন। দলের প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই দলে যোগ দেন।
জানা গেছে, বিকল্পধারার এই অনুষ্ঠানে বিএনপির সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত কয়েকজন সাবেক এমপি ও মন্ত্রীর যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু শেষ সময়ে বিএনপির হাইকমান্ডের তৎপরতায় তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। তবে এই অংশটি যে কোনো সময়ই বিকল্পধারায় যোগদান করবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
অবশ্য বিকল্পধারার এমন পরিকল্পনায় মোটেও চিন্তিত নয় বিএনপি। তাদের মতে, বি. চৌধুরী ও মাহী বি. চৌধুরী যতই চেষ্টা করুন- বিএনপির একজন কর্মীকেও দলছুট করতে পারবেন না। এর আগেও তারা বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এবারও জাতীয় প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টার মধ্যে তারা ষড়যন্ত্র করেছেন; কিন্তু সফল হননি।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়ন করে একজন কর্মীকেও আদর্শচ্যুত করতে পারেনি।
বিকল্পধারায় যোগদানের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে সমশের মবিন চৌধুরী জানিয়েছেন, বিএনপির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রশ্নে কিছুটা মতবিরোধ ছিল। তখন আশা করেছিলাম- বর্তমান বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে বিএনপি আরেকটু অসাম্প্রদায়িকতায় আসবে। এছাড়া নাশকতার রাজনীতিতে মোটেও বিশ্বাস করি না।
সূত্র জানায়, বিএনপির সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত দলের বাইরে থাকা ৪৫ নেতার মধ্যে প্রায় ১৫ জনের সঙ্গে বিকল্পধারা যোগাযোগ করছে। তাদের এমন তৎপরতার মধ্যে বিএনপির হাইকমান্ড গত বৃহস্পতিবার ১৩ নেতাকে দলে সক্রিয় করেন। অন্যদেরও পর্যায়ক্রমে দলে নেওয়া হবে- এমন আশ্বাসও দেওয়া হয়।
তবে এই আশ্বাসের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছেন না দলের বাইরে থাকা অন্য নেতারা। দলে সক্রিয় হওয়া ১৩ নেতার ওপরও তারা ক্ষুব্ধ। তাদের বাদ দিয়ে বিএনপির ডাকে গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে উপস্থিত হওয়াকে এক ধরনের অপমান মনে করছেন সংস্কারপন্থি অন্যান্য নেতা।
তারা নিজেদের বিএনপির কাছে গুরুত্বহীন বলে ভাবছেন। এই সুযোগকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিকল্পধারা। ক্ষুব্ধ সংস্কারপন্থির কয়েকজন নেতাকে টার্গেট করেছে তারা। বিষয়টি টের পেয়ে ওইসব নেতাকে দলে নেওয়ার পুনরায় আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। এই আশ্বাসের কারণে শেষ পর্যন্ত তারা আপাতত বিকল্পধারায় যোগ দেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন।
এদিকে, বিএনপি সৃষ্টির পর থেকে যেসব নেতা রাগে, অভিমানে অথবা ক্ষোভে দল ত্যাগ করেছেন, নিষ্ফ্ক্রিয় হয়েছেন কিংবা দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছেন, তাদের বিকল্পধারায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা শুরু করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চমক দেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও সূত্র জানায়।
বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে জানান, সামনে আরও বড় কিছু দেখা যাবে। এখনই এসব বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
তবে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মেজবাহ উদ্দিন জুন্নু বলেন, বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরী তার বক্তব্যে দেশের সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আগামীতে অনেক চমক দেখা যাবে।
এ বিষয়ে দলের একটি সূত্র জানায়, বিএনপিতে বিগত দশ বছরে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে তারা এই দলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে পারছেন না বলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এসব নেতাকে চিহ্নিত করার কাজ এরই মধ্যে বিকল্পধারা সম্পন্ন করছে। এমনকি অনেকের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠকও হয়েছে। এদের সহজেই বিকল্পধারায় আনা সম্ভব হবে বলে একজন নেতা জানান।
এদিকে বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট থেকে দুটি দল বের হয়ে যাওয়ার কারণে এই জোট বর্তমানে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। অচিরেই এই যুক্তফ্রন্টকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিচ্ছে বিকল্পধারা।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে আসা বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপিকে নিয়ে আপাতত যুক্তফ্রন্ট গড়ার কার্যক্রম শুরু করতে চাইছেন তারা। এরই মধ্যে তারা বেশ কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিকল্পধারায় বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতার যোগদানের চমক ছাড়াও যুক্তফ্রন্টকে কার্যকর করার কর্মসূচি আসতে পারে।