সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু

ডেস্ক রিপোর্ট

ঘনিয়ে আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো সাধারণ নির্বাচনের সময় গণনা।

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন মাঠ গরম হচ্ছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ইতিমধ্যে সরকার বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপে বসার কথাও জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অনেকেই একে বরফ গলার সঙ্গেও তুলনা করতে চাচ্ছেন।

universel cardiac hospital

বসে নেই নির্বাচন কমিশনও। ইতিমধ্যে সংস্থাটি ভোটের আয়োজনে সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে। কেননা, সংবিধানের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে।

ভোট আয়োজনের চূড়ান্ত প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ৩১ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে নির্বাচন কমিশন। যেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থার প্রতিনিধিদের নির্বাচনকালীন সব ধরনের সহায়তার নির্দেশনা দেওয়া হবে। এরপর ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির আব্দুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাত করে প্রস্তুতির বিষয়টি অবহিত করবে ইসি।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার পর আগামী ৪ কিংবা ৫ নভেম্বর একটি কমিশন বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন। যে বৈঠকেই চূড়ান্ত করা হবে তফসিল ও ভোটের তারিখ।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ইসি সচিব ইতিমধ্যে বলেছেন, ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, সম্পন্ন হয়েছে তিনশ আসনের সীমানা নির্ধারণ।

চূড়ান্ত করা হয়েছে ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোটকেন্দ্র এবং ২ লাখের বেশি ভোট কক্ষের তালিকা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭শ কোটি টাকা। যেটা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে ২শ কোটি টাকা বেশি।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পেছনেই ব্যয় হবে তিন ভাগের দুই ভাগ অর্থ। আর একভাগ রাখা হয়েছে নির্বাচন পরিচালনার জন্য। এতে ৪শ কোটি টাকার ওপরে চলে যাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে। এরই মধ্যে বিজি প্রেসকে ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

এবারের জাতীয় নির্বাচনে সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন। আর নারী ভোটার ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন। তবে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যারা ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন তারাও ভোট দিতে পারবেন। এতে ভোটার সংখ্যা আরো কিছু বাড়তে পারে। এবার ভোটার প্রতি ৮ টাকা করে প্রার্থীদের ব্যয়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ইভিএম:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রায় ২৯টি দল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারপরও নির্বাচন কমিশন প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে এ যন্ত্রে ভোট নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনের আগে ৮০ হাজার ইভিএম মেশিন প্রস্তুতের দিকে যাচ্ছে সংস্থাটি। এতে মোট কেন্দ্রের ১০ শতাংশ কেন্দ্রে ভোট নেওয়া যাবে। যদিও ইসির এতো বল নেই।

ইভিএম ব্যবহারের জন্য আগে আইন ছিল না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদে গতকাল সোমবার অনুমোদন হওয়া সে বাধা আর থাকছে না। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, আইনি কাঠামো পেলে আমরা ১০ শতাংশ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করতে পারবো। তবে ৩শ কেন্দ্রেও যদি ব্যবহার করতে চাই তবে আমাদের সক্ষমতার প্রয়োজন আছে।

সেনা মোতায়েন:
দেশের অধিকাংশ দলের দাবি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন হলে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সেনা মাঠে নামার আমন্ত্রণ জানাবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, যে কোনো কারণে যদি প্রয়োজন হয়, ভোটারদের আস্থা আনার জন্য অথবা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন হয়, আমরা করব।

অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল:
ইভিএমের মতো এবারই প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবে এমনটিই রেখেছে নির্বাচন কমিশন। যেটি অধ্যাদেশ আকারে হলেও জারি হওয়ার কথা রয়েছে। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমাদানের সুযোগ সৃষ্টি হলে প্রার্থীদের কেউ আর বাধা দিতে পারবে না।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোট জয়ী হলে সরকার গঠন করে। সে সময় জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশ বসে ২৯ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। অর্থাৎ আগামী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। আবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানে সংসদের মেয়ার শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের কথা বলা হয়েছে। সে কারণেই মঙ্গলবার সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হচ্ছে।

সুতরাং, সংবিধান অনুযায়ী ৩০ অক্টোবর ২০১৮ থেকে ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ সালের মধ্যে ভোটের আয়োজন করতে বাধ্য নির্বাচন কমিশন।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে