একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হবিগঞ্জের লাখাই থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. লিয়াকত আলী এবং কিশোরগঞ্জের আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. নূর হোসেন জানান, বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মুসলিম লীগের সাবেক সভাপতি মো. লিয়াকত আলী আমেরিকায় এবং রজব আলী দেশেই পলাতক আছেন।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে-
প্রথম
৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টা থেকে বেলা পৌনে দুইটা পর্যন্ত লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম ও তার সঙ্গীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের সঙ্গে নিয়ে লাখাই থানার কষ্ণপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে গণহত্যা ও লুটপাট করে। নুপেন রায়ের বাড়িতে রাধিকা মোহন রায় ও সুনীল শর্মাসহ ১৫ জন জ্ঞাত ও ২৮ জন অজ্ঞাত হিন্দুকে গুলি করে হত্যা করে।
দ্বিতীয়
১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম ও তার সঙ্গীরা পাকিস্তানিদের সঙ্গে নিয়ে চন্ডিপুর গ্রামে চন্দ্র কুমার ও জয়কুমারসহ ৯ জন হিন্দুকে গুলি করে হত্যা করে এবং গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট চালায়।
তৃতীয়
১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টার দিকে লাখাই থানার গদাইনগর গ্রামে লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম ও পাকিস্তানি আর্মি কর্তৃক চিত্ত রঞ্জন দাসের বাড়ির বাইরের আঙ্গিণায় জগদ্বীশ দাস, পিয়ারি দাস ও মহাদেবমাসসহ ২৬ জ্ঞাত-অজ্ঞাত আরও ৭/৮ জন আহত করে, তবে তারা বেঁচে যান।
চতুর্থ
১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম পাকিস্তানি আর্মিদের সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণপুর এলাকায় অভিযান চালানোর সময় হরিদাস রায় ও খিতিস রায়সহ ১০ জন হিন্দুকে অপহরণ করে অষ্টগ্রাম থানার সদানগর গ্রামের শ্মশানঘাটে নিয়ে গেলে রাত ১০টার দিকে আর্মিরা তাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে। এতে ঘটনাস্থলে ৮ জন মারা যান এবং ২ জন আহত হয়ে বেঁচে যান।
পঞ্চম
লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম ও তার সঙ্গীরা ৭১ সালের ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহে যেকোনো দিন বেলা ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসির নগর থানার ফান্দাউক বাজার থেকে রঙ্গু মিয়া ও বাচ্চু মিয়াকে অপহরণ করে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে টর্চার সেলে নির্যাতন করে।
পরের দিন দুপুর ১২টার দিকে রঙ্গু মিয়াকে নাসির নগর থানাধীন ডাকবাংলোর পাশে দত্তবাড়ির খালে হত্যা করে মরদেহ পানিতে ফেলে দেয়। অপহৃত বাচ্চু মিয়া অর্থের বিনিময়ে রাজাকারদের হাত থেকে মুক্তি পান।
ষষ্ঠ
১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর দুপুর আনুমানিক ১২টার সময় লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম, রাজাকার ও পাকিস্তানি সঙ্গীদের নিয়ে অষ্টগ্রাম থানার সাবিয়ানগর গ্রামে চৌধুরী বাড়ির উত্তর পাশে খালি জায়গায় ইশা খা ও আরজু ভূইয়াসহ ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে।
সপ্তম
১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর দুপুর আনুমানিক ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে লিয়াকত আলী, আমিনুল ইসলাম, রাজাকার ও পাকিস্তানি সঙ্গীদের নিয়ে অষ্টগ্রাম থানার সাবিয়ানগর গ্রামে খাঁ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মনির খাঁ ও সফর আলীসহ আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতাকামী ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করে।
ওই সময় রাজাকাররা বাড়িতে লুটপাট করে। এসব ঘটনায় ১৯৭২ সালে আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীর বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় তিনটি মামলা করা হয়। ওই অভিযোগে তার যাবজ্জীবন দণ্ড হয়েছিল।