শোকরানা মাহফিলে ‘মিথ্যা তথ্য’উপস্থাপনের প্রতিবাদ জানাল হেফাজত

ডেস্ক রিপোর্ট

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিলে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের হতাহতের ঘটনা নিয়ে ‘মিথ্যা তথ্য’ উপস্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।

কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ সংস্থা আল হাইয়াতুল উলইয়ার উদ্যোগে রোববার অনুষ্ঠিত শোকরানা মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব ‘২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে কেউ নিহত হয়নি’ বলেছেন যা ঠিক নয়, উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী।

সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এ প্রতিবাদ জানান। পৃথক আরেক বিবৃতিতে প্রতিবাদ জানান, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর সভাপতি নূর হোসাইন কাসেমী।

বিবৃতিতে জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে জানতে পেরেছি, সোহরাওয়ার্দীতে অনুষ্ঠিত শোকরিয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জয়নাল আবেদীন বলেছেন, ‘শাপলা চত্বরে কেউ নিহত হয়নি, এটা মিথ্যা প্রচারণা’ এই বক্তব্য নির্জলা মিথ্যাচার, নির্লজ্জতা ও সীমাহীন ঔদ্ধত্বপূর্ণ। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, শাপলা চত্বরে কেউ নিহত হয়নি’ মর্মে তার দেওয়া বক্তব্যে বাংলাদেশের আলেমসমাজ ও তওহিদী জনতা চরমভাবে ক্ষুব্ধ, ব্যথিত ও মর্মাহত। অনস্বীকার্য বাস্তবতা হলো, দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব মিডিয়ার বদৌলতে ২০১৩ সালের ৫ মে সন্ধ্যায় ও দিবাগত রাতে তৎকালীন সরকারের প্রশাসন কর্তৃক শাপলা চত্বরে মহান আল্লাহ ও প্রিয় নবী (সা.) এর বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের শাস্তির দাবিতে অবস্থানরত শান্তিপ্রিয় আলেমসমাজ ও তওহিদী জনতার ওপর নির্মম ও নিষ্ঠুর হামলা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে। যাতে অনেক মুসলমান শাহাদাত বরণ করেন এবং হাজার হাজার নবীপ্রেমিক জনতা আহত হন, পঙ্গুত্ব বরণ করেন।

জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, আমি স্বয়ং সেই রাতে ব্যাপক নিগ্রহের শিকার হই এবং পরের দিন সকালে আমিসহ অনেকেই গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হন আরও অনেক আলেম, মাদ্রাসাছাত্র ও সাধারণ মানুষ। ওইদিন শাপলা চত্বরে অবস্থানরত লাখ লাখ তওহিদী জনতা, দেশি-বিদেশি মিডিয়াকর্মী ও ঢাকাবাসী এ হামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। শুধু তাই নয়, সন্ধ্যার আগ থেকেই সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উগ্র সদস্যদের বর্বরোচিত আক্রমণে অবরোধকারী তওহিদী জনতার গুলিবিদ্ধ লাশ নানাদিক থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে আসতে থাকে। যার ভিডিও ফুটেজ প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হিসেবে রয়েছে। প্রায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এ খবর প্রকাশিত হয়।

হেফাজত মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে সে ঘটনাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা নিঃসন্দেহে চরম অমানবিক, মজলুম নবীপ্রেমিক জনতার সঙ্গে উপহাস আর শহীদদের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে যেখানে নিঃশ্বর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল, সেখানে সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখে এমন বক্তব্য নিঃসন্দেহে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা ও দাম্ভোক্তির শামিল। আমরা এ মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানাই।

বাবুনগরী বলেন, সোহরাওয়ার্দীতে উপস্থিত লক্ষ লক্ষ ইলমে নববীর ধারক বাহক, দেওবন্দিয়ত ও হক্কানিয়তের নিশানবরদার উলামায়ে কেরাম এত বড় মিথ্যা বক্তব্য কী করে সহ্য করলেন, তা ভেবে পাচ্ছি না। এতবড় মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করতে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে কারও অন্তরে ঈমানী তরঙ্গ ফুঁসে উঠল না, এটাই তাজ্জবের বিষয়। তাহলে, এটা কি কওমি সনদের স্বীকৃতির বিনিময়ে শোকরানা সভার মোড়কে শাপলার হত্যাকাণ্ডের অস্বীকারের আয়োজন। ৫ মে শাপলার শহীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে আমরা কেউ আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই পাবো না।

পৃথক বিবৃতিতে ঢাকা মহানগর সভাপতি নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, ৫ মে শাপলা চত্বর ট্রাজেডির বাস্তবতা ও সত্য ঘটনাবিরোধী এমন বক্তব্যের আমি তীব্র প্রতিবাদ করছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাজার-হাজার উলামায়ে কেরাম ও হেফাজত নেতাদের সমাবেশে এমন বক্তব্য তাদের সঙ্গে তামাশার শামিল। এমন বক্তব্যে দেশের আলেম সমাজ, হেফাজতকর্মী ও কোটি কোটি তওহিদী জনতা মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। সেদিন যে অসংখ্য উলামায়ে কেরাম ও হেফাজতকর্মী হতাহত হয়েছেন, তাজা রক্ত ঝরেছে; তার ভিডিওচিত্র ও অসংখ্য প্রমাণ এখনো বিদ্যমান আছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা নিহতদের তালিকাও প্রকাশ করেছে। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম এই নিয়ে অনেক তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। স্বজনহারা অসংখ্য পরিবারের এখনও কান্না থামেনি। পত্রিকায় প্রকাশিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাবে দেখা গেছে, ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে দেড় লাখের অধিক গ্রেনেড, বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। আলেমদের ওপরে যে নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা চালানো হয়েছে, সেই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেবেন। দোষীদের শাস্তি দেবেন। হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবেন।

এ প্রসঙ্গে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিলে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের হতাহতের বিষয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এজন্য প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

শোকরানা মাহফিলের মঞ্চে থাকা হেফাজত নেতারা কেন প্রতিবাদ করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে আজিজুল হক বলেন, হেফাজতের নেতারা যারা মঞ্চে ছিলেন, তাদের উচিত ছিল প্রতিবাদ জানানো। কেন তারা করেননি, সেটা আমার জানা নেই।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে