আজ সবার নজর গণভবনে

আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সৃষ্ট ধোঁয়াশার মধ্যেই আজ বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে বসছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সুধীসমাজ ও সচেতন জনগোষ্ঠীসহ সবার নজর এই সংলাপের দিকে। কারণ নির্বাচনপূর্ব রাজনীতির গতি-প্রকৃতি কোন দিকে যায় তা অনেকাংশে আজকের সংলাপের ওপর নির্ভর করছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে।

আজকের সংলাপের পরে আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থাৎ তৃতীয় দফা সংলাপ অনুষ্ঠানের সুযোগ নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। আবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথাও রয়েছে আগামীকাল ৮ নভেম্বর। কাজেই সব দিক থেকেই আজকের সংলাপকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে।

টেকনোক্র্যাট কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত মন্ত্রিসভার চার সদস্য গতকাল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করেছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে এ নিয়ে দুই ধরনের আলোচনা আছে।

কারো মতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার জন্যই প্রধানমন্ত্রী এমন সুযোগ তৈরি করেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া মন্ত্রিসভায় থাকার সুযোগ নেই—বিরোধী পক্ষের কাছে এমন বার্তা স্পষ্ট করার জন্যই এ ব্যবস্থা। তবে ঐক্যফ্রন্টকে মন্ত্রিসভায় ‘অফার’ করার সম্ভাবনা বেশি বলেই জানা যাচ্ছে।

যদিও প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারি দল শেষ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টকে কতটুকু ছাড় দেবেন, সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নন। তদুপরি নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্য থেকে বিকল্প একটি প্রস্তাব আজ সংলাপের জন্য নিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে রেখেই সংসদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা থাকবে। থাকবে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার দাবিও।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা খোলা মন নিয়ে সংলাপে যাব। কারণ দেশে আমরা অশান্তি চাই না। তবে আশা করব, সরকার সংলাপ নিয়ে নাটক করবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৭ দফা দাবির পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্য দাবি বা প্রস্তাবও থাকতে পারে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

আজকের সংলাপও প্রথম দিনের মতো সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ।

তিনি বলেন, সংলাপ করার উদ্দেশ্য একটাই, সবাইকে নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা, দেশে ও বিদেশে কেউ যাতে অভিযোগ না আনতে পারে।

ব্যর্থতার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, সংলাপ তো সফল হয়েই গেছে। প্রথম দিনের সংলাপেই ঐক্যজোটের ৭ দফার সাড়ে তিন দফা তারা আদায় করে নিয়েছে। তাই আমি মনে করি, দ্বিতীয় দফা সংলাপও সফল হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় দুইবার অনুষ্ঠিত সংলাপের পর বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে এবং দেশ সহিংসতার দিকে চলে যায়। ফলে সমঝোতা নাকি সংঘাত—এমন আলোচনা আর কৌতূহলও আজকের সংলাপকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে।

যদিও এবার কারও মধ্যস্থতায় নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সংলাপে রাজি হয়েছেন এবং চূড়ান্তভাবে কী হবে এটি তাঁর ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করছে; তাই পর্যবেক্ষক মহল তাঁর এই অবস্থানকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। অন্যদিকে আজকের সংলাপ থেকে কিছুটা হলেও অর্জন হবে—এমনটা মনে করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও। তাই সংলাপকে সামনে রেখে গতকালের জনসভা থেকে কঠোর কোনো কর্মসূচি দেয়নি সরকারবিরোধী এই জোট। কয়েকটি বিভাগীয় শহরে জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। পাশাপাশি তফসিল না পেছালে ১০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে নবগঠিত এই জোট।

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজকের সংলাপকে আগামী দিনের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মনে করেন। গতকাল তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকনির্দেশনা এই সংলাপ থেকে যেমন আসতে পারে, তেমনি হতাশা তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাঁর মতে, দুই পক্ষেরই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি যা হওয়ার তাই হবে।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে