কূটনীতিকরা নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে

ডেস্ক রিপোর্ট

বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর নির্বাচন প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা। এজন্য কয়েকটি দূতাবাসের রাজনৈতিক শাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাপ্তাহিক ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। কারণ, পরিস্থিতির ওপর প্রতিদিনই নিজ নিজ দেশে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাতে হচ্ছে দূতাবাসগুলোকে। বিশেষ করে, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী প্রভাবশালী দেশগুলোর ক‚টনীতিকরাও নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে।

বিদেশি কূটনীতিকরা আসন্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবার সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দিকে। বাংলাদেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক ও নির্বাচন পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘ সদর দফতরে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাচ্ছেন সংস্থাটির ঢাকাস্থ অফিসও। জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের উপমুখপাত্র ফারহান হক এ বিষয়ে জানান, বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর তাদের নজরদারি রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা জোর দিচ্ছি বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন। তাই আমরা বাংলাদেশের এসব ব্যবস্থাপনা নিয়ে অব্যাহতভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। লক্ষ্য রাখছি এসব অগ্রাধিকার বিষয়গুলো সমুন্নত রাখা হচ্ছে কিনা। আমরা বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে এসব বিষয় দেখতে চাই। মনে করছি, এটা উপযুক্ত সময়ে হতে পারে।

universel cardiac hospital

বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বরাবরের মতো এবারো বেশ আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যাতে নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হয় সে ব্যাপারে ঢাকা ও ওয়াশিংটনেও মত প্রকাশ করেছেন দেশটির কূটনীতিকরা। ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার ব্যাপারে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। ঢাকা থেকে বিদায়ের আগে রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটও একই মতামত জানিয়ে গেছেন। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অব্যাহত আলোচনা ও উন্মুক্ত মত বিনিময়কে উৎসাহিত করছে দেশটি। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর আরো জানায়, উন্মুক্ত সংলাপ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু। যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মূল্যবোধকে সমর্থন করে, যা উভয় দেশের নাগরিকরা পছন্দ করেন।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, পশ্চিমা ২৮ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবারো বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। ইইউর ঢাকাস্থ দূতাবাস থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠানো হচ্ছে। এজন্য নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ইইউ দূতাবাসের রাজনৈতিক শাখার ব্যস্ততা কয়েকগুণ বেড়েছে। এজন্য এই শাখার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটিও ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে এ মাসেই বাংলাদেশে আসছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন বিষয়ক ২ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল। দলটি নির্বাচনের পরও বাংলাদেশে অবস্থান করবে। এ সময়ে তারা নির্বাচন কমিশন, সরকারি ও অন্য রাজনৈতিক দল, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন এবং নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। তারা ইউরোপীয় কমিশনে নিয়মিত প্রতিবেদনও পাঠাবেন। সূত্র আরো জানায়, এ বছর বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বরেও অনেক দেশে নির্বাচন রয়েছে। ফলে সেসব দেশেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে। এজন্য ইইউ-এর নির্বাচন বিষয়ক প্রতিনিধিদের সেখানে মোতায়েন করায় এবার বড় কোনো প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছে না। যদিও ইইউ আগের নির্বাচনগুলোতে সবচেয়ে বেশি নির্বাচন প্রতিনিধি বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।

এদিকে ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক এখনো ছুটিতে রয়েছেন। তিনি এ মাসের শেষদিকে ঢাকায় ফিরবেন। ইইউর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতও ডেঙ্গু জ্বরে অসুস্থ রয়েছেন। তাই বৃহস্পতিবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ইইউ রাষ্ট্রদূতরা বৈঠকে বসতে পারেননি। রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক ঢাকায় ফিরলে ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূতদের নির্বাচনী দৌড়ঝাঁপ শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইইউ।

বৈঠকে ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত ইইউ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর সূক্ষ্মভাবে নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ওই বৈঠকে রেনজি টেরিংক ছাড়াও ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার এলিসন ব্লেইক, সুইডিশ রাষ্ট্রদূত চারলোটা স্কালাইটার, এলভারো ডি সালাস গিমেনিজ ডি আজকারেট, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি আন্নি বর্ডিন ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ডেনমার্ক, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের ক‚টনীতিকরা অংশ নেন।

পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে চীন ও ভারত বাংলাদেশের জনগণের পছন্দসই নির্বাচনকে স্বাগত জানানোর ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুয়ো বলেন, আমরা বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে চায়। তিনি বলেন, আমি আশা করি বাংলাদেশে খুব নির্ঝঞ্ঝাট সাধারণ নির্বাচন হবে এবং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশি জনগণের পছন্দকে চীন সম্মান জানাবে।

বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় বলে জানিয়েছে প্রতিবেশী ভারতও। দেশটির হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় ভারত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী জোট নিয়ে ভারত কোনো ধরনের মন্তব্য করবে না। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আমরা বিশ্বাসী। প্রতিবেশী দেশের গণতন্ত্রের প্রতি আমরা আস্থাশীল। বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে ভারত কোনো ধরনের সহিংসতা আশা করে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে