আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর

বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর এক মহাপ্রলয়ের দিন। এদিন উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলো গোটা উপকূল। উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ভোলা সাইক্লোন’। এ ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দেয় প্রায় সমগ্র উপকূল। প্রাণ হারান বহু মানুষ। বেঁচে থাকার শেষ সম্বল হারিয়ে পথে বসেন কয়েক লাখ মানুষ।

শুধু যে বাংলাদেশ তা নয়, এ ঘূর্ণিঝড় গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ৩ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়টি ওই বছরের ৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হয়ে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ নভেম্বর এটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটারে পৌঁছায়। ওই রাতেই আঘাত হানে উপকূলে।

জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ প্লাবিত হয়। ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় পাঁচ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটেছে বলে বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে মারা যায় প্রায় ১০ লাখ লোকেরও বেশি। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বিশ্বের পাঁচ ধরনের ভয়াবহ প্রাণঘাতি আবহাওয়া ঘটনার শীর্ষ তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়টিকে পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতি ঝড় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে ১৩ নভেম্বর ভোর পর্যন্ত বাংলাদেশের (তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তান) উপকূল অঞ্চলে সর্বকালের প্রাণঘাতি ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। এ ঝড়ে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে বাংলাদেশের ভোলা, নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামের সন্দীপ উপকূলে।

এ মহাপ্রলয়ের সেদিনটিকে ‘উপকূল দিবস’ হিসেবে পেতে চায় বাংলাদেশের উপকূলীয় ৭১০ কিলোমিটার তটরেখার মানুষ। এতো শত দিবসের ভিড়ে এ একটি দিবসের বিশেষ যৌক্তিকতা আছে বলেও মনে করেন উপকূলের মানুষ।

তারা মনে করছে একটি ঘোষিত দিবস কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারে, দিবস অধিকার আদায়ের কথা বলতে পারে, দিবস পারে জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর জোরালো করতে। প্রতিবছর একটি সুনির্দিষ্ট দিনে উপকূল দিবস পালিত হলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। তথ্য আদান-প্রদান, তথ্য অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চিত হবে। কেন্দ্রের কাছে পৌঁছাবে উপকূলের সুখ-দুঃখের কথা।

উপকূলের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সঙ্গে বাস করেন। উপকূলের নীতিনির্ধারকদের নজর বাড়িয়ে উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ঘটানোই উপকূলের জন্য একটি দিবস প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য। উপকূলের প্রান্তিকের তথ্য যেমন কেন্দ্রে পৌঁছায় না, ঠিক তেমনি কেন্দ্র মাঠে পৌঁছাচ্ছে না নানাবিদ কারণে। তাই ৭০’র মহাপ্রলয় স্মরণে উপকূলের মানুষ চায় ১২ নভেম্বর দিনটিকে উপকূল দিবস ঘোষণা করা হোক।

উপকূলের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি হিসাবে প্রায় পাঁচ লাখ এবং বেসরকারি হিসাবে প্রায় ১০ লাখ মানুষ স্রোতের টানে নদী-সমুদ্রগর্ভে, তীরে-ঢালে, ডালে-জলে-ঝোপে, চরে প্রাণ হারায়। সেই স্মৃতি বয়ে আজও যারা বেঁচে রয়েছেন কিংবা স্বজনদের হারিয়েছেন, কেবল তারাই অনুভব করেন সেদিনের ভয়াবহতা।

উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ওইসব এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় উপকূলীয় জনপদের উন্নয়ন, সংকটের উত্তরণ, সম্ভাবনা বিকাশসহ উপকূলের অন্ধকারকে প্রকাশের আলোয় আনতে ‘উপকূল দিবস’ প্রবর্তন এখন সময়ের দাবি।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে