রোহিঙ্গাদের বাধার মুখে প্রত্যাবাসন প্রথমবার ব্যর্থ হলেও আগামী সপ্তাহে প্রত্যাবাসন শুরু করতে আরও একটি চেষ্টা করবে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মন্নান গণমাধ্যমকে বলেন, রোহিঙ্গাদের বাধার মুখে প্রত্যাবাসন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
অবশ্য এই সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের দাবি বা শর্তগুলো কীভাবে পূরণ সম্ভব, সেটি জানে না প্রশাসন। তারা বলছে, একটি দলকে পাঠাতে গেলেই বোঝা যাবে পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যায়।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটির যাওয়ার কথা ছিল মিয়ানমার। কিন্তু ‘ন যাইয়ুম’, ‘ন যাইয়ুম’ স্লোগান তুলে দিনভর বিক্ষোভ করে তারা।
রোহিঙ্গাদের দাবি রাখাইনে তারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না। ৯০ দশকেও মিয়ানমার আশ্বাস দিয়ে দেশে নিয়ে পরে তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। প্রত্যাবাসন শুরুর আগে নাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিত করারও দাবি জানায় রোহিঙ্গারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এরপর জানান, তারা জোর করে কাউকে ফেরত পাঠাবেন না।
শুক্রবার সকালে কুতুপালং ক্যাম্প ঘুরে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়।
তারা জানান, নাগরিকত্ব, নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ফিরে যাওয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবছেন তারা।
কুতুপালং ক্যাম্পের আলী আহম্মদ বলেন, রাখাইনে এখনো নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। ছয় বছর আগে লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সিটওয়ে আইডিপি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তাদেরকে এখনো নিজ বাড়িতে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না। যেখানে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করার সুযোগ নেই সেখানে রোহিঙ্গারা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাখাইনে ফিরবে না।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদেরকে তার নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। ১৯৭৮ সালে নাগরিকত্ব বাতিলের পর নানা সময় সেনা অভিযান চালিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ করেছে। আর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। সবচেয়ে বড় স্রতটি আসে ২০১৬ সালের আগস্টে। সোয়া এক বছরেই বাংলাদেশে আসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আর আগে থেকে ছিল চার লাখ।
বিষয়টি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিম-লে নিয়ে যাওয়ার পর ব্যাপক চাপে পড়ে মিয়ানমার। আর রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিও করে। কিন্তু নানা টালবাহানায় বারবার পিছিয়েছে এই উদ্যোগ। যদিও এবার প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে।