বিশ্ব ইজতেমার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে

বিশেষ প্রতিনিধি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টঙ্গীতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমার তারিখ পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে। আগামী ১১ জানুয়ারি থেকে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে শুক্রবার জানানো হয়, বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত নয়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পরামর্শক্রমে পরে তারিখ ঘোষণা করা হবে।

আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর এই বিবৃতি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। সঠিক সিদ্ধান্ত হলো- বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত হয়নি, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের পরামর্শক্রমে পরবর্তী সময় বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করা হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা ও তাবলিগ জামাতের বিবদমান দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির বিষয়ে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতার লক্ষ্যে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শিগগিরই ভারতের দেওবন্দে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিনিধিদল ভারতের দেওবন্দ থেকে এসে উভয়পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের পরামর্শক্রমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামায়াতের বিশ্ব আমির দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি ও নিজামুদ্দীন মারকাজের বিরোধিতা করছেন পাকিস্তানের তাবলিগি নেতারা। তাই তাবলিগের মূল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নিজামুদ্দীন মারকাজের সমান ক্ষমতা দাবি করে আলমি শুরা গঠন করে রাইভেন্ড মার্কাজ।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অংশদারিত্বের বিবাদে দিল্লি-লাহোর জড়িয়ে পড়লে বিশ্বজুড়েই এর প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে তাবলিগ জামায়াতের প্রধানকেন্দ্র কাকরাইল মসজিদেও ছড়িয়ে পড়ে এ বিভক্তি।

১১ জন শুরা সদস্যের মাঝে ছয়জন নিজামুদ্দীনের পক্ষে থাকলেও বাকি পাঁচজন আলমি শুরার পক্ষে অবস্থান নেন।

এ অংশের বিরোধিতায় বিগত বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ ও নিজামুদ্দীনের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ এসেও ইজতেমায় অংশ নিতে পারেননি।

পরে কাকরাইল মসজিদে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুরব্বিদের উপস্থিতিতে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর তিন চিল্লার সাথীদের জোড় এবং ১১, ১২, ও ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেন।

এর বিরোধিতা করে ডিসেম্বরের ৭ থেকে ১১ জোড় এবং জানুয়ারির ১৮, ১৯ ও ২০ ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করে অপর পক্ষ।

তাবলিগ জামাতের ইতিহাসে এ প্রথম ইজতেমা ও জোড়ের তারিখ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এ দ্বন্দ্ব নিরসনেই বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাবলিগ জামায়াতের দুই পক্ষকে নিয়ে বসা বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এছাড়া তাবলিগ জামাতের মুরব্বিদের মধ্যে শুরা সদস্য মাওলানা যুবায়ের আহমদ ও সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

আলেমদের মধ্যে শোলাকিয়া ঈদগাহর খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ও গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসানও উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নাল আবেদিন, পুলিশের আইজি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, ধর্মসচিব, সেতু বিভাগের সচিব, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে