নির্বাচনে বিদ্রোহী দমনে বিএনপির বিশেষ কৌশল

বিশেষ প্রতিনিধি

বিএনপি গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে যাতে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে না পারেন সেজন্য নতুন কৌশল নিয়েছে বিএনপি।

জানা যায়, কৌশলের অংশ হিসেবে সারা দেশে ৩০০ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যারা সাক্ষাৎকার দেবেন তাদের সবাইকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেবে দলটি।

এছাড়া আরও দুটি কারণে সবাইকে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

রোববার প্রথম দিনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে ১৫৮ জন, রাজশাহী বিভাগের ৪১টি আসনে ৩৬৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিএনপি। সাক্ষাৎকার শেষে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে এই দুই বিভাগের ৫২৬ জনকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী-১ আসনে থেকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অধ্যাপক শাহাদত হোসেন শাহীন। তিনি বলেন, এই আসন থেকে ধানের শীষে প্রার্থী হতে আমিসহ আরও ৩ জন সাক্ষাৎকার দিয়েছি। সাক্ষাৎকার শেষে সবাইকে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সবাইকে মনোনয়ন জমা দিতেও বলে দেওয়া হয়েছে।

দিনাজপুর-৪ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রবিবার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জেলা বিএনপির কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল হালিম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এই আসন থেকে আমরা চারজন সাক্ষাৎকার দিয়েছি। আমাদের সবাইকে প্রাথমিকভাবে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখন কে চূড়ান্তভাবে ধানের শীষের মনোনয়ন পাবেন তা পরে জানা যাবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো দল চাইলে এক আসনে একাধিক ব্যক্তির দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিতে পারবে। তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে দল থেকে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তা জানাতে হবে। তখন দলীয় মনোনীত ব্যক্তি ব্যতীত অন্যদের প্রার্থিতা স্বাভাবিকভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী যেকোনো দল চাইলে এক আসনে প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থী দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে দল থেকে যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে তিনিই দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। বাকিদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে। ফলে কারও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকবে না। কারণ মনোনয়ন জমা দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট তারিখ রয়েছে। এরপরে কেউ চাইলেও মনোনয়ন জমা দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৮ নভেম্বর। প্রার্থিতা যাচাই-বাচাই ২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৮ নভেম্বর। ফলে সবাই এখন দলীয় মনোনয়ন জমা দেবে। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর। ফলে বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তা জানানো হবে ১-২ দিন আগে। তখন কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে পারবেন না। কারণ তার আগেই মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার তারিখ শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া আরও অনেক কারণে এক আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলটির দুজন স্থায়ী কমিটির সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে ৩০০ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যারা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছে, তাদের সবাইকে প্রাথমিকভাবে দলের মনোনয়নের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রথমত, সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া, যাতে কেউ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না পায়। দ্বিতীয়ত, ঋণ খেলাপি হিসেবে অনেকের প্রার্থিতা বাতিল করবে নির্বাচন কমিশন। তাই বিকল্প হিসেবে এক আসনে একাধিক প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে– যাতে করে একজন বাদ পড়লে অন্যজনকে প্রার্থী করা যায়। তৃতীয়ত, এক আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ার কারণে সবাই চূড়ান্ত মনোনয়নের আশায় মাঠে থাকবে, ফলে তৃনমূলে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তিও বাড়বে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ৪ হাজার ৫৮০ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে রোববার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে দলটি। রোববার রাত সাড়ে ১২টায় এই দুই বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষ হয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে