দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘদিন মানি না, মানব না বললেও সব শঙ্কা-উদ্বেগ-অনিশ্চয়তা কাটিয়ে সব রাজনৈতিক দলই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েই নেমে পড়েছে নির্বাচনীযুদ্ধে। সেই সঙ্গে গড়েছে দেশের ইতিহাসে দলগুলোর মনোনয়নপত্র বিক্রির নতুন রেকর্ড।
সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইতিহাসবিদদের মতে, বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে মাত্র তিনশ’ আসনের বিপরীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজারের কাছাকাছি যাওয়ার ঘটনা দেশের ইতিহাসে অবশ্যই রেকর্ড। তবে অন্যান্য দেশের পরিসংখ্যান না থাকায় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটিই বিশ্ব রেকর্ড কি-না তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দেশের স্বাধীনতার ৪৭ বছরের ইতিহাসে মনোনয়ন বিক্রিতে রেকর্ড গড়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।
অঙ্কের হিসাবে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রতিটি আসনে প্রায় ৪০ জন। স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত গত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এত মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি অতীতে কখনও দেখা যায়নি। নির্বাচনে দাঁড়ানো গণতান্ত্রিক অধিকার বলা হলেও এমন রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ বলেও মনে করছেন রাজনীতির সংশ্লিষ্টরা।
সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মোট মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ৪ হাজার ২৩ জন। অর্থাৎ প্রতি আসনে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ১৩ জন। বিএনপিতে তিনশ’ আসনের বিপরীতে মনোনয়নসংগ্রহ করেছেন ৪ হাজার ৫৮০। এ দলটির প্রতি আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ১৫ জন। বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও মনোনয়ন বিক্রিতে রেকর্ড করেছে। দলটি তিনশ’ আসনের বিপরীতে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে ২ হাজার ৮৬৫টি। এ দলটিরও প্রতি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ১০ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বাইরেও জোট-মহাজোট-ঐক্যফ্রন্ট-যুক্তফ্রন্টসহ নানা নামে নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্যান্য দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও অবাক করার মতো। হাতেগোনা ১০-১৫ আসনেও বিজয়ী হওয়ার মতো যোগ্য প্রার্থী না থাকলেও এসব দল মনোনয়ন বিক্রি করেছে শত শত।
জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে আসা ঐক্যফ্রন্টের অন্য দলগুলোতে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা দেড় শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে আসা যুক্তফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোটসহ অন্য দলগুলোও দলীয়ভাবে এক থেকে দেড়শ’ মনোনয়নপ্রত্যাশীর কাছে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সাম্যবাদী দল, কমিউনিস্ট কেন্দ্রসহ বাম রাজনৈতিক দলগুলো এবং জাতীয় পার্টি জেপিসহ অন্যান্য দল মিলিয়ে প্রায় শতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছে বলে তাদের দাবি।
সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রির হিসাবগুলো মিলিয়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি শুধু বড় এই তিন রাজনৈতিক দলেরই মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ১১ হাজার ৪৬৭ জন। এছাড়া ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ১৪ দল, জাতীয় পার্টি জেপি, ইসলামী দলগুলো এবং নিবন্ধন হারানো জামায়াতসহ নির্বাচনে আসা সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও কম-বেশি ৫শ’র কাছাকাছি। সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রির হিসাব যোগ করলে তা প্রায় ১২ হাজারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছায়। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পুনঃতফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নবেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটের দিন ৩০ ডিসেম্বর।