রাজ পরিবারেই যুবরাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রস্তুতি চলছে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভিন্ন মতাবলম্বী সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে খুনের ঘটনায় পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ অব্যাহত থাকার পাশাপাশি সৌদি রাজপরিবারের কিছু সদস্যও উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরোধিতায় সরব হচ্ছেন। আল-সৌদ পরিবারের ওই সদস্যরা উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদের বাদশাহ হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সৌদি রাজপ্রাসাদ সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রাজপরিবারের বিভিন্ন শাখার প্রিন্স ও মোহাম্মদের জ্ঞাতি ভাইদের অনেকেই সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রশ্নে পরিবর্তন দেখতে চান। তবে ৮২ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান বেঁচে থাকা অবস্থায় এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ তারা নেবেন না বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।

universel cardiac hospital

পশ্চিমা বিশ্বে এমবিএস (মোহাম্মদ বিন সালমান) নামে পরিচিত ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ এখনো বাদশাহর প্রিয়পুত্র হওয়ায় তাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠলেও সালমান তাতে কান দেবেন না বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে।

তবে রাজপরিবারের সদস্যরা এখন বাদশাহর মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই ৭৬ বছর বয়সী প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজকে সিংহাসনে বসাতে আগ্রহী। বাদশাহ হলে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদের এ চাচা পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা এবং কিছু পশ্চিমা দেশেরও সমর্থন পাবেন বলে সৌদি একটি সূত্র জানিয়েছে।

আড়াই মাস বিদেশে কাটিয়ে প্রিন্স আহমেদ গত মাসে রিয়াদে ফিরেছেন। বিদেশে থাকাকালে লন্ডনে তার বাসভবনের সামনে সৌদ সাম্রাজ্যের পতন চেয়ে বিক্ষোভকারীদের স্লোগানের প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরবের বর্তমান নেতৃত্বের সমালোচনাও করেছিলেন বাদশা সালমানের এ ছোটভাই।

২০১৭ সালে উত্তরাধিকার নির্ধারণ কমিটির যে তিন জ্যেষ্ঠ সদস্য এমবিএসকে ক্রাউন প্রিন্স বানানোর বিরোধিতা করেছিলেন, আহমেদ তাদের একজন ছিলেন বলেও দুটি সূত্র সেসময় নিশ্চিত করেছিল।

এ বিষয়ে প্রিন্স আহমেদ কিংবা তার প্রতিনিধিদের কারও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। রিয়াদের কোনো কর্মকর্তাও উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে রয়টার্সের যোগাযোগে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।

প্রসঙ্গত, ইউরোপীয় রাজপরিবারের মতো সৌদিতে রাজার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার বড় ছেলে সিংহাসনের উত্তরাধিকার হতে পারেন না। সৌদি রাজপরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী, বাদশাহ এবং পরিবারের বিভিন্ন শাখার সিনিয়র সদস্যরা মিলে তাদের দৃষ্টিতে সিংহাসনের জন্য সবচেয়ে বেশি যোগ্য ব্যক্তিকেই উত্তরাধিকার হিসেবে মনোনীত করেন।

তবে ওই মনোনয়নই শেষ কথা নয়। বাদশার মৃত্যু কিংবা তিনি রাজকাজ পরিচালনায় অক্ষম হলে ৩৪ সদস্যের কাউন্সিলই নতুন বাদশাহ ঠিক করবেন। আগে থেকে ঠিক করে রাখা উত্তরাধিকারের বাদশাহ হতে হলেও কাউন্সিলের সম্মতি লাগবে। এমবিএসের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়া প্রভাবশালীরা এখন সেই ক্ষণেরই অপেক্ষা করছেন।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সৌদি রাজপরিবারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনায় প্রিন্স আহমেদকে পরবর্তী বাদশা বানালে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে এমন বেশ কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।

প্রায় চার দশক সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আহমেদ দায়িত্ব পেলে এমবিএস-এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারে কোনো রকম বদল আনবেন না বলেও জানিয়েছে আস্থাশীল সূত্রগুলো। সালমানের এ ভাই পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রিয়াদের সামরিক চুক্তিগুলো বহাল রাখার পাশাপাশি রাজপরিবারের মধ্যে একতাও ফিরিয়ে আনবেন বলে মত তাদের।

ওদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, সাংবাদিক খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতাদের চাপ ও সিআইএ-র মূল্যায়নের পরও হোয়াইট হাউস এখনই এমবিএসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরিতে আগ্রহী নয়। তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ অবস্থান বদলেও যেতে পারে।

কেবল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের জড়িত সন্দেহভাজন হওয়ার কারণেই নয়, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনায় আগ্রহ দেখানোতেও যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর ক্ষেপেছে বলে ধারণা সৌদি সূত্রগুলোর।

সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে চলতি বছরের ১৫ মে লেখা মোহাম্মদের এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেখার কথাও জানিয়েছে রয়টার্স। চিঠিতে ক্রাউন প্রিন্স রাশিয়ার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র ও যুদ্ধে ব্যবহৃত সরঞ্জাম কেনার ওপর জোর দিতে বলেছিলেন।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে