অবশেষে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু বকর আবুর লাশ পাওয়া গেছে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের জন্য আবু বকর আবু গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় আসেন। সোমবার বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডে তার সাক্ষাৎকার দেয়ার কথা ছিল। রোববার রাত ৮টার পর রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
নিহত আবু বকর আবু যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি কেশবপুরের মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন।
জানা গেছে, দুদিন আগে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করেছে পরিবারের সদস্যরা।
আবু বকর আবুর ছোট বোন আঞ্জুমানারা বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের ফেসবুক পেজে ছবি দেখে ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেছি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, আবু বকর আবু ঢাকা থেকে নিখোঁজ ছিলেন। শুনছি তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
পরিবারের সদস্য ও বিএনপি নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের জন্য আবু বকর আবু গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় আসেন। পল্টন এলাকার মেট্রোপলিটন হোটেলের চতুর্থতলায় ৪১৩নং রুমে ছিলেন। সেখান থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে ও জমা দেন। সাক্ষাৎকার বোর্ডে অংশ নেয়ার জন্য ওই হোটেলেই অবস্থান করছিলেন।
১৮ নভেম্বর রোববার রাত ৮টার দিকে তার সঙ্গী মজিদপুর ইউপি মেম্বার সাইফুল ইসলাম ওষুধ কিনে ফিরে এসে তাকে আর রুম পায়নি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে কেশবপুরে অবস্থানরত তার এক ভাগনের মোবাইলে কয়েকবার মিসকল আসে।
প্রত্যেকবার ব্যাক কলে শুধু হ্যালো হ্যালো ছাড়া কোনো কথা হয়নি। এরপর ০৯৬৩৮৮৮৮২০২ নম্বর মোবাইল থেকে ওই ভাগ্নের কাছে ফোন দিয়ে তার মামার জন্য দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ জন্য ওই রাতে কয়েকটি বিকাশ নম্বরও সরবরাহ করেন তারা।
কিন্তু রাত ১২টার পর বিকাশের ট্রানজিট বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার সকালে অপহরণকারীরা ০১৭৪৮১১০৫৭৭ নম্বর মোবাইল থেকে পুনরায় যোগাযোগ করে। এরপর তাদের দেয়া বিভিন্ন নম্বরে দেড় লাখ টাকা বিকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে সকাল ৯টার দিকে অপহরণকারীরা দেড় লাখ টাকার প্রাপ্তি স্বীকার করে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন।
বহু অনুরোধের পর অপহরণকারীরা ২০ হাজার টাকা বিকাশ করার জন্য দুটি নম্বর সরবরাহ করে বলেন, ওই টাকা পাওয়ার আধাঘ ণ্টার মধ্যে আবু বকর আবুকে ওই হোটেলের সামনে ছেড়ে আসা হবে। সাড়ে ১০টার দিকে ২০ হাজার টাকা বিকাশ করার পরও তাকে ছাড়া হয়নি এবং তারা আর মোবাইল রিসিভ করেনি।
দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অপহরণকারীদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আবু বকর আবুর মোবাইল ফোনটি বন্ধ ছিল।