ইসির দিক নির্দেশনায় অস্ত্র উদ্ধারে শুরু হচ্ছে বিশেষ অভিযান

ডেস্ক রিপোর্ট

শিগগিরই দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান। নির্বাচন কমিশন থেকে এ ব্যাপারে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পেয়েছে পুলিশ। অভিযান চালানো হবে সেই আলোকে।

নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরাও।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা অনুযায়ী অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালিত হতে পারে।

পুলিশের আরও একাধিক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন সামনে রেখে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালাবে পুলিশ। তবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে সারা বছরই গোয়েন্দারা তৎপর থাকেন।

সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনায় অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে দুর্বৃত্তদের। ২৬ অক্টোবর পোস্তগোলা ব্রিজে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। ওই ঘটনায় সোহেল নামে এক পুলিশ সদস্য মারা যান। ৩ নভেম্বর খিলগাঁওয়ে চাঁদা না দেওয়ায় একটি গ্যাংস্টার গ্রুপের ১০-১২ সদস্য দোকানে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। ২২ অক্টোবর রাজধানীর উত্তরায় ডাকাতের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির পর একটি আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলিসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, অনেক সন্ত্রাসীর হাতে বিদেশে তৈরি পিস্তল দেখা যায় এখন। ওজনে হালকা, গুলি করার সময় শব্দ ও ঝাঁকুনি কম এবং সহজেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এ ধরনের অস্ত্র। বিদেশি অস্ত্র ১-৫ লাখ টাকায় মিলছে। অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের চালান সীমান্ত পথে দেশে ঢোকে। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সীতাকুণ্ড, বান্দরবান, সাজেক, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, মোংলা, উখিয়া, রামু, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রাউজান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, হিলি ও সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র আসছে। নিজস্ব পদ্ধতিতে অস্ত্র তৈরি হচ্ছে দেশেও।

এ ছাড়া চলতি বছর বশির আহমেদ ওরফে রানা ওরফে সেলিম ও আজিজসহ চারজনকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। গ্রেফতার অন্য দু’জন হলেন রংপুরের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন বাবু ও তার সহযোগী মাসুদ রানা। তাদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল ও ৬ রাউন্ড গুলি পাওয়া গেছে। নির্বাচনের বছরে কীভাবে আন্ডারওয়ার্ল্ডে অস্ত্র সরবরাহ করে লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়, সেই ছক কষছিল রানা।

তদন্ত সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, অস্ত্রসহ গ্রেফতারের পর বাবু পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, বিক্রির জন্য আনা দুটি অস্ত্রের একটি রাজশাহীর একজন বৈধ ডিলারের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকায় কিনেছেন তিনি। আরেকটির মালিক ছিলেন রংপুরের এক নারী। তিনি পৈতৃক সূত্রে ওই অস্ত্রটি পেয়েছিলেন। এরপর ওই নারী তার কাছে সেটি বিক্রি করে দিয়েছেন। দুটি অস্ত্র পৃথকভাবে কেনার পর তা রানার কাছে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। বিক্রির পর অস্ত্রের নম্বর পাল্টানোর প্রস্তুতি ছিল তাদের।

এর আগে ২০১২ সালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন রানা। তখন তার হেফাজত থেকে আটটি অস্ত্র জব্দ করা হয়। নতুন প্রতিটি রিভলবারের ক্ষেত্রে ৩-৭ লাখ টাকা ও আর পুরনো অস্ত্রের ক্ষেত্রে ২-৬ লাখ নিয়ে থাকেন রানা।

চলতি বছর বাড্ডায় ছয়টি চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা। আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, খাল ভরাট, জমি ব্যবসা, বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ, অন্যের জমিতে মাছের ঘের নির্মাণ করে দখলে রাখা, মাদক ব্যবসা, ডিশ ব্যবসা ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঘটছে এসব খুনের ঘটনা।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে