একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত।আজ সোমবার কে কোন আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা জানা যেতে পারে বলে দলীয় সূত্রে প্রকাশ।
সূত্র মতে, আজ সোমবার থেকে দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত টিকিট দেয়া হতে পারে। ঢাকার বাইরের আসনগুলোতে যারা মনোনয়ন পাচ্ছেন তাদের অনেককে ফোন করে আজ ঢাকায় থাকার কথা বলা হয়েছে। দলীয় একাধিক সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ২৪০টি আসনে প্রার্থী দেবে বিএনপি।বাকী ৬০টি আসন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটকে (সম্প্রসারিত ২৩ দল)দেয়া হবে।
এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো পাচ্ছে ৪০ থেকে ৪২টি আসন। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলো পাচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টি আসন।
২০ দলীয় জোটে বিএনপিসহ দল আছে ২৩টি। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি ছাড়া দল আছে ৪টি।
জানা গেছে, বিএনপি প্রার্থী তালিক আরও একদিন আগেই চূড়ান্ত হয়ে আছে।কিন্তু দুই জোটের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় প্রার্থী তালিকা দিতে দেরি হল।
মাঠজরিপ ও প্রার্থীদের অতীত কর্মকাণ্ড ও তৃণমূল নেতাদের মত নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটি প্রার্থীদের খসড়া তৈরি করে রাখে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় তালিকার খসড়া করা হয়।
খসড়া তালিকা বেশিরভাগ আসনে একাধিক প্রার্থীর নাম ছিল।ওই খসড়া থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সবকিছু ঠিক থাকলে আজ সকাল ১০টার পর থেকে দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দেয়া হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কোনো কোনো আসনে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হতে পারে। ওইসব আসনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে একক প্রার্থী দেবে বিএনপি।
কোনো কোনো আসনে দু’জন রাখা হচ্ছে এ কারণে যে, আইনি জটিলতায় কারো প্রার্থিতা যদি বাতিল হয়ে যায় তবে সেখানে যেন প্রার্থী শূণ্য না থাকে।
তাই কোনো কোনো আসনে কৌশলগত কারণে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হতে পারে। অবশ্য মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ফরমেও প্রার্থীদের স্বাক্ষর রাখা হবে।
প্রার্থীজটের কারণে জটিলতা তৈরি হওয়া আসনগুলোর ব্যাপারে আগামী ৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেই চূড়ান্ত করা হবে।
এ ক্ষেত্রে শরিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও মনোনয়ন জমা দিতে বলা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় আর দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনোননের চিঠিতে সাক্ষর করবেন।
এ সংক্রান্ত দলের সিদ্ধান্তের একটি চিঠি সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরে প্রতিটি জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ১০টায় গুলশান কার্যালয় থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চিঠি দেওয়া হতে পারে। অপেক্ষাকৃত দূরের জেলাগুলোর আসনের প্রার্থীদের নাম আগে ঘোষণা দেওয়া হবে।
সেক্ষেত্রে আজ দুই শতাধিক আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে। বাকিগুলো আগামীকাল ঘোষণা হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গণমাধ্যমকে জানান, বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে আজ সোমবার থেকে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হবে।
সূত্রমতে, বিএনপির মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে ২০০১ ও ২০০৮ সালে দলীয় প্রার্থী তালিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া কারাগারে যাওয়ার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের করা একাধিক জরিপকেও সামনে রাখা হয়েছে।
ঢাকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির পুরোনো অনেক প্রার্থীই এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন না রাজধানীতে।
ঢাকাতে অন্তত পাঁচ থেকে সাতটি আসন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও জোটের নেতাদের দেওয়া হতে পারে। দলের হেভিওয়েট প্রার্থীরাও ছিটকে পড়ছেন রাজধানীতে। বিভিন্ন স্থানে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় এবং বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক সিনিয়র নেতা জানান, দুই জোটকে জায়গা করে দিতেই রাজধানীতে বিএনপির কিছু আসন ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এসব আসনে জোটেরও হেভিওয়েট নেতারা ভোটযুদ্ধে লড়বেন।
বেশ কিছু আসনে মূল প্রার্থীর পাশাপাশি বিকল্প প্রার্থীকেও চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
গতকাল রোববার বিকালের পর থেকেই গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে ভিড় বাড়তে শুরু করে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে।
রাতে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা গুলশান কার্যালয়ে আসেন। সেই সঙ্গে জোট ও ফ্রন্টের নেতাদের কর্মী-সমর্থকরাও গুলশান কার্যালয়ে জড়ো হন।
কার্যালয়ের ৮৬ নম্বর রোডের দুই পাশে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
জানা গেছে, মির্জা ফখরুল দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নে সই করেন। এর আগে রোববার দিনভর নয়াপল্টন কার্যালয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ করেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজের অবস্থানের কথা জানতে চান।
মনোনয়নের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গণমাধ্যমে বলেন, বিএনপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। জোট ও ফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করে বাকিগুলো চূড়ান্ত করা হবে। অপেক্ষাকৃত যোগ্য, দক্ষ ও জনপ্রিয় নেতারাই দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন।