২০২১ সালের আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পথে

ডেস্ক রিপোর্ট

গত ৫ বছর ছিল তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা পূরণের সময়। এই ৫ বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে যেমন অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, তেমনি বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে।

এ খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে করে ২০২১ সালের আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্পন্ন হবে।

বিগত ৫ বছরে অনেকগুলো পুরস্কার অর্জনসহ অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে— যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক চালু, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্তি, ‘ডাক টাকা’র প্রচলন, সফটওয়্যার ও সেবা খাতে রফতানিতে হাজার কোটি টাকার কাছে পৌঁছানো (২০১৮ সালে টার্গেট ছিল এক বিলিয়ন ডলার), ফোর-জি ও মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) চালু, দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ, ব্যান্ডউইথের ব্যবহার এক টেরা’র কাছাকাছি পৌঁছানো, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ১১ লাখ ৯৪ হাজারে উত্তীর্ণ, মোবাইল সংযোগ ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজারে পৌঁছানো।

আর এসব কারণেই বলা হচ্ছে— তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে গত পাঁচ বছরে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে।

এছাড়া, ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের অগ্রগতি, বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ডাটা সেন্টার নির্মাণ কাজ শুরু, অ্যাপস ও গেমিং ডেভেলপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি প্রকল্পের যাত্রা, মহেশখালীকে ডিজিটাল দ্বীপে রূপান্তরের কাজের উদ্বোধন, সারাদেশে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব তৈরি, ই-কমার্স নীতিমালা এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০২১ সালের আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশের বিনির্মাণের কাজ শেষ হবে। আমরা অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করেছি। এখন দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়, মানুষের দরজায় সেবা (ইন্টারনেট) পৌঁছাতে হবে।

তিনি জানান, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ২, ৫ ও ১০ বছর মেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করেছে আইসিটি বিভাগ। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদের রোডম্যাপ ধরেই বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক জানান, ২০১৪ সালে দেশে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হতো ১৫০ জিবিপিএস। বর্তমানে যার পরিমাণ ৮৫০ জিবিপিএস’র (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) বেশি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৩৫০ জিবিপিএস। একই বছরের আগস্টে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২১ জিবিপিএসে। এই হারে ব্যান্ডউইথ বাড়তে থাকলে এ বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে তা এক টেরাবাইটে (১০২৪ জিবিপিএস) পৌঁছবে। দেশে ব্যবহার হওয়া ৮৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের মধ্যে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) গ্রাহকরা ব্যবহার করেন ৬২০ জিবিপিএস। আর মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ব্যবহার করে ২০০ জিবিপিএস। অবশিষ্ট ৩০ জিবিপিএস ব্যবহার করেন ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা।

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে ব্যবহার হতো ৫৫০ জিবিপিএস’র কিছু বেশি ব্যান্ডউইথ। ওই মাসে ফোর জি চালুর পর থেকে এপর্যন্ত ৯ মাসে ব্যান্ডউইথ’র ব্যবহার বেড়েছে ৩০০ জিবিপিএস’র বেশি।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ২০০৬ সালে সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-ইউ-৪-এ যুক্ত হয়। বর্তমানে এটি দিয়ে দেশে আসছে ২৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। আর দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-ইউ-৫ দিয়ে আসছে ৪৫০ জিবিপিএস। যদিও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা এক হাজার ৫০০ জিবিপিএস। এছাড়া, ছয়টি আইটিসি বর্তমানে দেশে আসছে ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ।

যশোরকে প্রযুক্তিনগরী ও ডিজিটাল অর্থনীতির হাব হিসেবে গড়ে তুলতে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক উদ্বোধন করা হয়। পার্কে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসহ ১৫ তলা মাল্টি-টেনেন্ট বিল্ডিং, আন্তর্জাতিক থ্রি-স্টার মানের আবাসন ও জিমনেসিয়ামের সুবিধাসহ ১২ তলা ডরমেটরি বিল্ডিং, একটি ক্যান্টিন ও অ্যাম্ফিথিয়েটার, ৩৩ কেভিএ পাওয়ার সাব-স্টেশন, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সংযোগ এবং অন্যান্য ইউটিলিটি সার্ভিস রয়েছে।

২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে (আঙুলের ছাপ) সিম নিবন্ধন শুরু হয়। সারাদেশে এক লাখ ডিভাইসের মাধ্যমে এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলে। এর আগে ২১ অক্টোবর সচিবালয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি টেলিটকের একটি নতুন সিম কিনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সেটি নিবন্ধন করেন। সে সময় দেশে মোবাইলফোনের ব্যবহারকারী (সংযোগ) ছিল ১৩ কোটি ৯ লাখ। আর বর্তমানে সংযোগ সংখ্যা ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার।

২০১৭ সালের বছরজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় থাকলেও বছর শেষে রোবট মানবী সোফিয়ার আগমন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। ডিসেম্বরের প্রথম ১০ দিন পুরো দেশ যেন সোফিয়াতে বুঁদ হয়েছিল। ওই বছরই প্রথম আইসিটি ডে-২০১৭ (১২ ডিসেম্বর) পালিত হয়।

এবছরের ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোর কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। ৩৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিরক্ষরেখার ১১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রিতে স্থাপিত হয় এটি। এরপর বিভিন্ন কারিগরি পরীক্ষা শেষে স্যাটেলাইটের নির্মাতা ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া গত ৯ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর নিয়ন্ত্রণ তথা টাইটেল বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে। নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে এমন তালিকায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৫৭তম দেশ।

এবছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশে চালু হয় ফোর-জি সেবা। গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেল এই সেবা চালু করে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের পক্ষ থেকেও ফোর-জি সেবার লাইসেন্স নেওয়া হলেও এখনও সেবাটি চালু করতে পারেনি। বর্তমানে ফোর জি গ্রাহক সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা যায়।

নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল (এমএনপি) সেবা চালু হয় এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর। সেবা চালুর পরে অপারেটর পছন্দ বা পরিবর্তনে গ্রাহকরা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। এই সেবা চালুর পর থেকে এপর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী নম্বর ঠিক রেখে তাদের অপারেটর বদল করেছেন।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে