মহাজোটে জাতীয় পার্টি পেল ৪৫ আসন

ডেস্ক রিপোর্ট

মহাজোটগতভাবে ৪৫টি আসন পেয়েছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এই ৪৫টি আসন সমঝোতায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ ও মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার রোববার সই করেছেন। সোমবার মহাজোট যৌথভাবে ৩০০ আসনে আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণা করার কথা থাকলেও কৌশলগত কারণে করা হয়নি বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান ওবায়দুল কাদের।

প্রথমে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কাছে ৭০টি আসন দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছিল মহাজোট সহ ১৪ দল ও যুক্তফ্রন্ট এমনকি সকল রাজনৈতিক মিত্রদের জন্য ৭০টি আসন ছাড় দিতে রাজি তারা। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কাছে ৭০টি আসন দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছিল মহাজোট সহ ১৪ দল ও যুক্তফ্রন্ট এমনকি সকল রাজনৈতিক মিত্রদের জন্য ৭০টি আসন ছাড় দিতে রাজি তারা। এই প্রেক্ষাপটে জাপা যে ৭০টি আসন পাচ্ছে না তা আগে থেকেই অনুমান করা যাচ্ছিল। আসন বণ্টন নিয়ে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন জাপা প্রতিনিধিরা। প্রথমে ৩৫টি আসন দেয়ার কথা বলা হয়। এই বার্তা শোনার পর কিছুটা মান করেন এরশাদ। পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাত করেন তিনি। এতে আরও কিছুটা আসন বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এরমধ্যে রবিবার আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসনে মনোনয়ন প্রাপ্তদের চিঠি দেয়। অর্থাৎ ৭০টি আসনে কাউকে চিঠি দেয়া হয়নি।

এদিকে বনানীর কার্যালয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, আমরা মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করব এবং ৪৫টি আসন পেয়েছি। আরও কিছু আসন নিয়ে আলোচনা করছি। তবে কৌশলগত কারণে প্রত্যাহারপত্র নিয়ে আমরা আরও ১৫০ আসনে মনোনয়ন দাখিল করব।

তিনি বলেন, জোটগতভাবে আমরা শিগগিরই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করব। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশ হিসেবেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে। মহাজোটের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতেই প্রায় ২০০ আসনেই মনোনয়নপত্র দাখিল করবে জাতীয় পার্টি। তবে, প্রার্থিতা বাছাই প্রক্রিয়া শেষে, মহাজোটের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আলোচনার মাধ্যমে মহাজোটের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে। মহাজোটে কোনো মতপার্থক্য নেই। রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টি চায় সব সময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশ পরিচালিত হোক। গত ২৭ বছর জাতীয় পার্টি নানা প্রতিকূলতার মাঝেও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। পল্লীবন্ধু এরশাদ কারাগারে থেকেও দুবার পাঁচটি করে আসনে বিজয়ী হয়েছেন। সব দলের অংশ গ্রহণে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা আমাদের। জাতীয় পার্টির আমলেই দেশে উন্নয়ন শুরু হয়েছে। আমরা চাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক।

এ সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ফখরুল ইমাম, সাইদুর রহমান টেপা, এসএম ফয়সল চিশতী, নাসরিন জাহান রত্না, নুরুল ইসলাম ওমর, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এম এ কাশেম, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, কাজী মামুনসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মহাজোটের হয়ে জাপার সম্ভাব্য প্রার্থীরা: রংপুর-৩ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ঢাকা-১৭ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ময়মনসিংহ-৪ বেগম রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ-৭ বেগম রওশন এরশাদ, পটুয়াখালী-১ এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, চট্টগ্রাম-৫ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশীদ, কক্সবাজার-৩ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, রংপুর-১ মশিউর রহমান রাঙ্গা, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক চুন্নু, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রত্না, নীলফামারী-৪ আলহাজ শওকত চৌধুরী/আদেলুর আদেল, কুড়িগ্রাম-৩ ড. আক্কাস আলী সরকার, গাইবান্ধা-১ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ নুরুল ইসলাম তালুকদার, বগুড়া-৬ নুরুল ইসলাম ওমর, বগুড়া-৭ অ্যাডভোকেট আলতাফ আলী, পিরোজপুর-৩ রুস্তম আলী ফরাজী, ময়মনসিংহ-৫ সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ সেলিম ওসমান, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সিলেট-২ ইয়াহিয়া চৌধুরী, সিলেট-৫ সেলিম উদ্দিন, কুমিল্লা-২ আমির হোসেন ভূইয়া, কুমিল্লা-৮ নুরুল ইসলাম মিলন, লক্ষ্মীপুর-২ মো. নোমান, লালমনিরহাট-৩ গোলাম মোহাম্মদ কাদের, খুলনা-১ সুনীল শুভ রায়, ফেনী-৩ লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, বরিশাল-২ মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা), হবিগঞ্জ-১ আলহাজ আতিকুর রহমান, গাইবান্ধা-৩ ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, কুড়িগ্রাম-২ পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-৫ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, রাজশাহী-৫ আবুল হোসেন, সাতক্ষীরা-২ আজাহার হোসেন, নীলফামারী-৩ মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল/ফারুক কাদের, কুষ্টিয়া-১ শাহরিয়ার জামিল, নাটোর-১ মো. আবু তালহা, দিনাজপুর-৬ দেলোয়ার হোসেন। এ ছাড়া বরগুনা-২ আসনে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ মিজানুর রহমান, কুড়িগ্রাম-৪ আশরাফ-উদদৌলাসহ আরও ৫টি আসন জোটগতভাবে পাওয়ার আশা করছে জাতীয় পার্টি।

তবে দলের পক্ষ থেকে ২০০ আসনে চিঠি দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রতীক বরাদ্দের আগে এরা প্রত্যাহার করবে। দলীয় মনোনয়ন যাদের দেয়া হয়েছে, তাদের কাছ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের স্বাক্ষর নিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

এদিকে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সোমবার দুপুরে নিয়মিত চেকআপ করাতে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যান। এরশাদের উপদেষ্টা কাজী মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি এখন সেখানেই আছেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে