বিএনপির বিকল্প প্রার্থী পারিবারিক গণ্ডিতেই আবদ্ধ

ডেস্ক রিপোর্ট

পারিবারিক গণ্ডিতেই আবদ্ধ বিএনপির বিকল্প প্রার্থী। কারো ছেলে, কারো পুত্রবধূ, কারো মেয়ে, কারো মেয়ের জামাই পেয়েছেন বিকল্প প্রার্থী হিসেবে বিএনপির মনোনয়ন। সেভাবে তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলও করেছেন। দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ আসনে মূল প্রার্থীর পরিবারের বাইরের কেউ দলীয় মনোনয়নপত্র পাননি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পারিবারিক রাজনীতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত নতুন নেতৃত্বকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গতকাল বুধবার। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে অধিকাংশ আসনেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলের প্রধান প্রার্থী মামলা, ঋণখেলাপিসহ অন্য কোনো কারণে নির্বাচনে অযোগ্য হলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রার্থীকে দলীয়ভাবে চূড়ান্ত করা হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-২ আমান উল্লাহ আমান ও তার ছেলে ইরফান ইবনে আমান, ঢাকা-৩ গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও তার পুত্রবধূ নিপুন রায় চৌধুরী, ঢাকা-৪ সালাহউদ্দিন আহমেদ ও তার পুত্র তানভীর আহমেদ রবীন, ঢাকা-৬ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন, ঢাকা-১০ দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ও তার মেয়ের জামাই দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, কিশোরগঞ্জ-৫ শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল ও তার ছেলে মাহমুদুর রহমান উজ্জ্বল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লা-১ ও ২ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে দুদক অনুসন্ধান করছে। এ কারণে তিনি এবং তার ছেলে খন্দকার মারুফ হোসেন কুমিল্লার একই আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখন কোনো কারণে যদি খন্দকার মোশাররফ হোসেন নির্বাচন করতে না পারেন, তাহলে সেই আসনে তার ছেলে খন্দকার মাহবুব হোসেন নির্বাচন করবেন।
দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হলে তার তিনটি আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৩ জন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নিজের আসন ঠাকুরগাঁও-১-এর পাশাপাশি খালেদা জিয়ার বগুড়া-৬ (সদর) আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোরশেদ মিল্টন। আর ফেনী-১ (পরশুরাম-ফুলগাজী-ছাগলনাইয়া) আসনে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনুর মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করার কথা আমরা কখনো ভাবিনি। এটা সরকারে অপকৌশল, নির্বাচনের ঠিক পূর্বে এ রায় ঘোষণা করার অর্থই হচ্ছে দেশনেত্রীকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা। পার্টির সিদ্ধান্তে চেয়ারপারসনের আসন
বগুড়া-৬-এ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। ‘খালেদা জিয়ার নামে’ই নির্বাচন করব। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করব।
সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের মধ্যে ১৫ আসনে বিএনপি অন্তত ২৫ জনকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এদের মধ্যে মূল প্রার্থীর স্ত্রী ও সন্তানও রয়েছেন। সিলেট-২ আসনে ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার পাশাপাশি তার ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস অর্ণব মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মৌলভীবাজার-৩ আসনে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী সাইফুর রহমানের ছেলে এম নাসের রহমান ও তার স্ত্রী রেজিনা নাসের, মৌলভীবাজার-৪ আসনে মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও তার ছেলে মুঈদ আশিক চিশতী বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এ ছাড়া পঞ্চগড়-১ আসনে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, যশোর-১ আসনে প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, মানিকগঞ্জ-২ আসনে খোন্দকার দেলোয়ারের ছেলে খোন্দকার আখতার হামিদ ডাবলু, গাজীপুর-৩ আসনে আ স ম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান, মানিকগঞ্জ-১ আসনে শামসুল ইসলাম খানের ছেলে মাইনুল ইসলাম শান্ত, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে হারুনার রশীদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খান রীতা, নওগাঁ-৩ আসনে ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ হামিদ সিদ্দিকী, চাঁদপুর-২ আসনে নুরুল হুদার ছেলে তানভীর হুদা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে প্রয়াত কাজী আনোয়ার হোসেনের ছেলে কাজী নাজমুল হোসেন তাপস এবং প্রয়াত ফজলুর রহমানের সহধর্মিণী অধ্যাপিকা কামরুন্নাহার শিরিন নাটোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে