‘মুক্তির গান’, ‘মাটির ময়না’, ‘আদম সুরত’, ‘রানওয়ে’-এর মতো সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা নির্মাতা তারেক মাসুদের আজ ৬২তম জন্মবার্ষিকী।
এ উপলক্ষে তারেক মাসুদের গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গার নূরপুরে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে বলে জানা গেছে। এদিকে সার্চ ইঞ্জিন সাইট গুগল তাদের ডুডলের মাধ্যমে তারেক মাসুদকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
১৯৫৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ভাঙ্গার নূরপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তারেক মাসুদ। তার শিক্ষাজীবন শুরু মাদ্রাসায়। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
১৯৮৫ সালের শেষের দিকে ‘আদম সুরত’ তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন তিনি। এটি নির্মাণ করেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী এসএম সুলতানের জীবন নিয়ে। এরপর বেশ কিছু তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে স্ত্রী ক্যাথরিনের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেন তথ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’।
২০০২ সালে তারেক মাসুদ নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।
‘মাটির ময়না’ প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে অস্কার প্রতিযোগিতায় বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
এডিনবার্গ, মন্ট্রিল, কায়রো উৎসবেও ‘মাটির ময়না’ প্রদর্শিত হয়। পাশাপাশি ২০০২ সালে মারাকেশ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার লাভ করে। ২০০৩ সালে করাচি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও সেরা সিনেমার পুরস্কার লাভ করে। ২০০৪ সালে ব্রিটেনের ডিরেক্টরস গিল্ড পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয় সিনেমাটি।
তার নির্মিত সর্বশেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’ মুক্তি পায় ২০১০ সালে। তারেক মাসুদের উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো ‘অন্তর্যাত্রা’ (২০০৬), ‘নরসুন্দর’ (২০০৯) প্রভৃতি।
তারেক মাসুদ বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে অংশ নেন তিনি। বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি।
১৯৮৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেন।
এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি সাময়িকী ও পত্রিকায় চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখালেখি করতেন।
তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ একজন মার্কিন নাগরিক। ক্যাথরিন এবং তারেক মিলে ঢাকায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন যার নাম অডিও ভিশন। এই দম্পতির ‘বিংহাম পুত্রা মাসুদ নিশাদ’ নামে এক পুত্রসন্তান রয়েছে।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট তার স্বপ্নের প্রজেক্ট ‘কাগজের ফুল’ সিনেমার শুটিং স্পট নির্বাচন করে ফেরার পথে মানিকগঞ্জের ঘিওরে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। সেদিন তারেক মাসুদের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী টেলিভিশন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরও নিহত হন। এ ছাড়া ইউনিটের আরো তিনজন মারা যায়। ২০১২ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করা হয়।