ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট

বিএনপির বঞ্চিতরা বিকল্পদের বাদ দিয়ে একক প্রার্থী ঘোষণার পরই বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। ক্ষোভের জেরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঝোলানো হয়েছে তালা। চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের সামনেও হয়েছে বিক্ষোভ ও হামলা।

একাধিক আসনে বিএনপির প্রার্থীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা পারলে ঘোষিত প্রার্থীকে পাস করিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা, গুলি হয়েছে।

বিএনপি অবশ্য এই প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ছোটখাটো দুয়েকটি প্রতিক্রিয়া, এটা কি নতুন কিছু? এটা তো নতুন নয়। বরং যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তারা অত্যন্ত জনপ্রিয়।

২৯৫ আসনে প্রার্থী দিতে বিএনপি এবার মনোনয়ন দিয়েছে আট শতাধিক নেতাকে। তাদের মধ্যে শতাধিক জমাই দেননি মনোনয়নপত্র। জমা করেন মোট ৬৯৬ জন। তাদের মধ্যে আবার ১৪১ জন বাদ পড়ে যান যাচাই-বাছাইয়ে। এদের মধ্যে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৬০ জনের বেশি।

যাচাই-বাছাইয়ের আগে মোট ৩৮ আসনে বিএনপি একক প্রার্থী দিয়েছিল। যাচাই-বাছাইয়ের পর ৯১টি আসনে একক প্রার্থী থাকে।

তবে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় বেশ কিছু আসনে আবার একাধিক বিকল্প প্রার্থী তৈরি হয়। আর এদের মধ্যে বিএনপি শুক্রবার বেছে নেয় ২০৬ জনকে। এই নাম ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার পাশাপাশি ঢাকায় শুরু হয় বিক্ষোভ।

পরদিন গতকাল শনিবারও চলতে থাকে বিক্ষোভ। এর জেরে কয়েক ঘণ্টার জন্য নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ঝোলানো হয় তালা।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান এবং জমিরউদ্দিন সরকারও ভোটে দাঁড়াননি। এর মধ্যে জমিরউদ্দিন জানিয়েছেন বয়সের কারণে তিনি ভোটে নেই। তার পঞ্চগড়-১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন ছেলে নওশাদ জমির।

দলীয় কার্যালয়ে তালা, গুলশান কার্যালয়ে হামলা :

চাঁদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এহছানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে আছে মামলার পাহাড়। জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাসনা থেকে সম্প্রতি তিনি ফেরেন দেশে। নিজের পাশাপাশি স্ত্রী নাজমুন্নাহার বেবীর জন্য কেনেন মনোনয়ন ফরম। ধারণা করা হচ্ছিল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর কপালেই জুটবে চূড়ান্ত মনোনয়ন। তিনি না হলে অন্তত স্ত্রীর ভাগ্যে জুটবে মনোনয়ন।

কিন্তু অবাক করে দিয়ে সেখানে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান মালয়েশিয়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন। আর বিষয়টি মানতেই পারছেন না মিলনের সমর্থকরা।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে এলাকার নেতাকর্মীদের সম্পর্ক নেই। মিলন দীর্ঘদিন বিদেশে থাকলেও তিনি তাদের সব সময় খোঁজখবর রেখেছেন। অসংখ্য মামলার আসামি হওয়ার পরও তিনি দেশে ফিরেছেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে।

বিক্ষোভ চলাকালে একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিলনের শতাধিক সমর্থক নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা দিয়ে দেন। পরে বেলা দুইটার দিকে ওই তালা খুলে দেন বিক্ষোভকারীরা।

এ সময় দলীয় কার্যালয়ে ছিলেন বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী। বিক্ষোভের মধ্যেও তিনি বের হয়ে আসেননি।

নয়াপল্টন থেকে মিলনের সমর্থকরা যান বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে। সেখানে তারা বাইরে থেকে কার্যালয়ের ভেতরে ঢিল ছুড়তে থাকেন। সেখানে ঢিলের আঘাতে আহত হন বেসরকারি টেলিভিশন ইনডিপেনডেন্টের একজন ক্যামেরা পারসন।

শাহ মোয়াজ্জেমের গাড়িবহরে হামলা, ঝাড়ু মিছিল :

মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের মনোনয়নও মানতে চাইছে না স্থানীয় বিএনপির একটি বড় অংশ। তারা বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে ঝাড়ু হাতে মিছিলের পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয় তার গাড়ি। বিক্ষুব্ধরা শাহ মোয়াজ্জেমকে পাল্টে শেখ আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন দেওয়ারও দাবি জানান।

বিকেল চারটার দিকে শ্রীনগর থেকে সিরাজদিখানের পাথরঘাটায় যাওয়ার পথে ঢাকা-মাওয়া সড়কের কুচিয়ামোড়া এলাকায় শাহ মোয়াজ্জেমের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ছয়টি গাড়ি, পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। শাহ মোয়াজ্জেমের গাড়িচালকসহ সাতজন আহত হন। তাদের কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুরের প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রংপুর সদরের প্রার্থীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা স্থানীয় বিএনপির :

রংপুর সদর আসনে নিজের প্রার্থী না দিয়ে বিএনপি ধানের শীষ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোটের শরিক রিটা রহমানকে। মির্জা ফখরুল তার নাম ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রংপুরে সংবাদ সম্মেলন করে রিটাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বিএনপির নেতারা।

মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগ বিএনপি নেতার :

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে (ছাতক-দোয়ারাবাজার) বিএনপি প্রার্থী করেছে মিজান চৌধুরীকে। কিন্তু স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে কলিম উদ্দিন মিলনকে প্রার্থী করার দাবি জানান।

বিক্ষোভের সময় ছাতক উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিফজুর বারী শিমুল বলেন, বৃদ্ধা মাকে জেলে রেখে কুলাঙ্গার সন্তান মনোনয়ন-বাণিজ্য করে। আমরা জেল খাটি, আমার ভাইয়েরা-সহকর্মীরা জেল খাটে। এই মনোনয়ন মানি না, মানব না।

শিমুল বলেন, কোনো স্বর্ণ চোরাকারবারি, কোনো দুষ্কৃতকারী বিএনপির নাম ধরে ছাতকে আসতে পারবে না। যেসব নেতা মনোনয়ন-বাণিজ্য করেছে, তাদের আমি উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ জানাই, আপনারা আসুন, আপনাদের মিজানকে বিজয়ী করুন।

বিক্ষোভ করেছেন পিরোজপুর-২ আসনের আহম্মদ সোহেল মনজুর, নরসিংদী-৩ আসনের সানাউল্লাহ মিয়ার সমর্থকরাও।

মনোনয়ন না পেয়ে কান্নাকাটিও করেছেন সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ারের ছেলে আখতার হামিদ ডাবলু। বোনকে নিয়ে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে যাওয়া নিয়ে হাতাহাতিও হয়েছে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মীদের সঙ্গে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে