ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদের (ব্রেক্সিট) প্রতি ব্রিটিশদের অনীহা বেড়েছে।
জরিপ সংস্থা বিজিএম রিসার্চের সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের ৫২ শতাংশ নাগরিক বিশ্বের বৃহত্তম এ অর্থনৈতিক জোটে থাকতে চাইছে। ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে আরেকটি গণভোটের চিন্তা করছেন দেশটির কলা-কৌঁসুলিরা।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেই দ্বিতীয় ভোটের দাবি জানিয়েছেন। কয়েকজন মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র ব্রেক্সিট চুক্তির বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেছেন। মন্ত্রী-আমলাদের এমন ধূম্রজালে ব্রিটিশ নাগরিকরাও ইউরোপেই থাকতে চাইছেন।
দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানায়, প্রায় দেড় হাজার ব্রিটিশদের ওপর জরিপ চালিয়েছে বিজিএম। জরিপে ৫২ শতাংশ নাগরিক ইইউ’তে থাকতে চান। ৪০ শতাংশ ব্রেক্সিট চুক্তির বাস্তবায়ন চান। ৬ শতাংশ জানিয়েছে, তারা জানেন না এতে লাভ বা ক্ষতির মাত্রা কেমন। বাকি ১ শতাংশ কোনো মন্তব্য করেননি। তেরেসার ব্রেক্সিট চুক্তিকে খারাপ চুক্তি বলে মত দিয়েছেন ২৩ শতাংশ নাগরিক। একে ভালো চুক্তি বলেছেন মাত্র ১৩ শতাংশ ব্রিটিশ, যা মোট অংশগ্রহণকারীর প্রতি ১০ জনে একজন। ভালো বা খারাপ কোনোটার পক্ষে নেই ১৫ শতাংশ নাগরিক।
ব্রেক্সিট নিয়ে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি মন্ত্রী-এমপিরা। মে’র মন্ত্রিসভার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, কোনো কোনো মন্ত্রী সরকারের উপদেষ্টাদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, মে’র পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে আরও বেশি সময় নেয়া উচিত। ব্রেক্সিট চুক্তিতে আস্থা অর্জনের জন্য পার্লামেন্টে ভোটাভুটির আগে আরেকটি গণভোট দেয়াই একমাত্র উপায় বলে মনে করেন বহু মন্ত্রী।
শ্রম ও অবসরবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাম্বার রাড এ বিষয়ে খোলাখুলি বলেন, ‘নরওয়ে-স্টাইলের সফ্ট ব্রেক্সিট চুক্তির পথ কানাগলির মতো। এতে বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়।’ ব্রেক্সিট ইস্যুতে দ্বিতীয় গণভোটের সম্ভাবনাকেও ফেলে দেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, ৪৪ বছর ইইউর সঙ্গে থাকার পর গত বছরের ২৯ মার্চ ব্রাসেলসে জোটের বিধি অনুযায়ী তেরেসা মের সরকার জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার পত্র পেশ করে। তারপর উভয় পক্ষ দেনা-পাওনা নিয়ে বারবার আলোচনায় বসেছে।
আগামী দিনগুলোতে ইইউর সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন বা দেশগুলোর জনগণের কাজকর্ম ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা, ভ্রমণের বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ কতটা থাকবে কতটা থাকবে না, তা নিয়ে বিতর্ক বিবাদের পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ইইউর বিধি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জোটের অন্তর্বর্তীকাল দুই বছর। আর এই অন্তর্বর্তী সময়েই যুক্তরাজ্য জোটে না থেকেও জোটের সঙ্গে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে নতুন ধরনের চুক্তি করতে চায়। জোট সদস্যরা তা নাকচ করে দিয়েছে। সমস্যাটা সেখানেই।