আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যেতে সক্ষম হলে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করবে জামায়াতে ইসলামী। যে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে খোদ এই দলেরই জ্যেষ্ঠ নেতাদের ফাঁসি হয়েছে এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন কয়েকজন নেতা।
দলটির নেতারা বলছেন, বিদ্যমান যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আছে তার কার্যক্রম অব্যাহত রেখে ‘প্রকৃত’মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াতের।
এ বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সিলেট মহানগর দক্ষিণের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি কী আমি এখনও জানি না,তবে আমরা ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত থাকবে। বিচার করবো ইনশাল্লাহ। যুদ্ধাপরাধীদের আইনে যারা পড়বে,তাদের বিচার করবো।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনি ইশতেহারে জানিয়েছে, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান থাকবে।’ যদিও চলমান যে অবয়বে, যে পদ্ধতিতে কার্যক্রম চলছে, তাতে যোগ-বিয়োজন হবে কি-না এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু ইশতেহারে বলেনি ঐক্যফ্রন্ট।
জামায়াত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমান বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তারা অব্যাহত রাখার কথা বলেছে। তবে ট্রাইব্যুনাল থাকবে কি-না, কোন পদ্ধতিতে থাকবে, তা বলতে পারবো না।
গত কয়েক বছরে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী,সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান,আবদুল কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলীর এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন সাবেক আমির গোলাম আজম, সাবেক নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীসহ অনেকে। এই নেতাদের দলীয় ও সাংগঠনিকভাবে ‘সম্মানের’ সঙ্গেই বিবেচনা করে আসছে জামায়াত এবং দলটির অনুজ ছাত্র শিবির।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মনে করেন, আইনি দিক থেকে যদি বলা হয়, তাহলে যুদ্ধাপরাধ নয়, এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। এটার চ্যাপ্টার শেষ হয়ে গেছে। সরকার তো বলেছে, এক্ষেত্রে তারা সফল। এখন নতুন করে কী করবেন? যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা বলতে পারবেন।
উল্লেখ্য, জামায়াতের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ। ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি দলটির সাবেক আমির গোলাম আজম তার বক্তব্যে বলেছেন, ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মাত্র ৫৮টি আসনে বিজয়ী হয় আর বিএনপি ১৯৭টি আসন পায়। জোটবদ্ধভাবে ওই নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলগুলোর শতকরা ২০ ভাগ ভোট একতরফা বিএনপি পাওয়ায় আওয়ামী লীগ মাত্র পাঁচ হাজার থেকে বিশ হাজার ভোটের ব্যবধানে বহু আসন হারায়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার কারণ হিসেবে বুঝতে পেরেছিল যে,জামায়াতে ইসলামীকে ঘায়েল করতে না পারলে ভবিষ্যতে নির্বাচনে বিজয়ের কোনও আশা নেই। এ উপলব্ধি থেকেই ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে জামায়াত নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধীর অপবাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রচারাভিযান চালায়।
জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মনে করেন, বাংলাদেশে নির্বাচন এলেই ধর্ম আর যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি ওঠানো হয়। সাধারণত এই দুটি বিষয় কেউ বলে না। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমস্যা কী, দুর্নীতি হচ্ছে, লুটপাট হচ্ছে–এসব বিষয়েও মনোযোগ দেওয়ার কথা। সামনে কীভাবে যাবো, সে বিষয়গুলো মূল আলোচ্য হওয়া উচিত।