প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়ার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পশিবিরের আঁতাত ও মুখ বন্ধ রাখতে পর্নো তারকাদের অর্থ প্রদান এখনও তদন্তাধীন। এ নিয়ে স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলার আদালতে দেয়া তার সর্বশেষ নথিতে ট্রাম্পকে নির্বাচনী আইন ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।
করেছেন ‘ইনডিভিজুয়্যাল ওয়ান’ তথা এক নম্বর আসামি। বিশ্ব গণমাধ্যমে এখন এই খবরগুলো প্রতিদিনই শিরোনাম হচ্ছে। শিগগিরই আরও কিছু আইনি ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছেন।
দিন যত যাচ্ছে, নিউইয়র্ক আর ওয়াশিংটনে তার বিরুদ্ধে তদন্তের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। এর কোনো না কোনোটি তার তীব্র মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে ট্রাম্পের সামনে অন্তত ছয়টি চ্যালেঞ্জ এবং এতে ফল কি হতে পারে, তা তুলে ধরা হয়েছে।
অভিষেক অনুষ্ঠানে অর্থের অপব্যবহার :
বৃহস্পতিবার এক রিপোর্টে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ২০১৭ সালে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে অর্থের অপব্যবহারের অভিযোগে আয়োজক কমিটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন ফেডারেল অপরাধ আদালত।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে মোট ১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার অর্থ উত্তোলন করে আয়োজক কমিটি। কোনো প্রেসিডেন্ট অভিষেক অনুষ্ঠানে তোলা এটাই রেকর্ড অর্থ ছিল।
এই অর্থ কিভাবে খরচ করা হয়েছিল এবং অর্থ প্রদানের মাধ্যমে নতুন প্রশাসনের কাছে দাতারা কোনো সুবিধা নিয়েছে কিনা তা-ই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। অভিযোগ রয়েছে, নয়-ছয় করে খরচ করা হয়েছে ওই অর্থ।
নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ:
মুলারের তদন্তের আসল লক্ষ্য হচ্ছে, রাশিয়া ও ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণাশিবিরের মধ্যকার যোগসাজশের বিষয়টি প্রকাশ করা। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু রিপোর্ট মতে, নির্বাচনে আরও কয়েকটি দেশের হস্তক্ষেপ করেছিল।
সেই দেশগুলোকেও তদন্তের আওতায় আনা হতে পারে। ডেইলি বিস্ট জানিয়েছে, রাশিয়ার মতো ট্রাম্পকে জেতাতে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছিল মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তিন মিত্রদেশ সৌদি আরব, ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। চলতি বছরের শেষেই ‘দ্বিতীয় ধাপের’ তদন্তে এ দেশগুলোর বিষয়ে তদন্ত শুরু করবেন মুলার।
ট্রাম্প হোটেল :
শুধু নির্বাচনী আইন ভঙ্গ নয়, ট্রাম্পের জন্য অন্য বিপদও অপেক্ষা করছে। নতুন যে নথি ম–লার আদালতে উপস্থিত করেছেন, তাতে রাশিয়ার সঙ্গে তার ব্যবসায়িক সম্পর্কের ব্যাপারটিও উঠে এসেছে।
মস্কোতে তিনি রুশ অর্থানুকূল্যে একটি হোটেল বানানোর তালে ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি সে কথা চেপে যান। কারণ, তার বিশ্বাস ছিল, তিনি জিতবেন না।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে রুশদের কাছে তার গুরুত্ব বাড়বে। ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন জানিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্টের আনুকূল্য লাভের চেষ্টায় তাকে ৫ কোটি ডলারের একটি ফ্ল্যাট দেয়ার কথাও বিবেচনায় এসেছিল।
ট্রাম্প ফাউন্ডেশন :
ট্রাম্প ও তার সহযোগীদের স্বার্থের বিষয়ে চলমান ফেডারেল তদন্তের পাশাপাশি নিউইয়র্ক রাজ্য আইনজীবী ও তদন্তকারীরা তার দাতব্য সংস্থা ট্রাম্প ফাউন্ডেশন নিয়েও পর্যালোচনা করছেন। নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল বারবারা আন্ডারউড অভিযোগ করে বলেছেন, ট্রাম্পের রাজনৈতিক ও ব্যবসায় স্বার্থ এগিয়ে নিতে তৎপর রয়েছে তার প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশন। এই তৎপরতা করমুক্ত দাতব্য সংস্থাবিষয়ক রাজ্য আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুখ বন্ধে ঘুষ প্রদান :
এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে আদালতকে সব কথা জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন। এই অপরাধে তিন বছরের জেলও হয়েছে তারা।
কোহেন জানিয়েছেন, কীভাবে তিনি ট্রাম্পের নির্দেশে নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস ও প্লেবয় মডেল ল্যারেন ম্যাকডুগালকে অর্থ ধরিয়ে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনের আগে তাদের মুখ বন্ধ রাখা।
ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্যদের মধ্যে যারা আগামী মাস থেকে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করবেন, তাদের অন্যতম জ্যারেড নেডলার (আগামী কংগ্রেসে বিচার বিভাগীয় কমিটির নেতৃত্ব দেবেন) জানিয়ে দিয়েছেন, বিষয়টি তদন্তের বিবেচনা তার রয়েছে।
নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ :
শুরুতেই বলা হয়েছে, নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত করছেন বিচার বিভাগের স্পেশাল কাউন্সেল মুলার। ইতিমধ্যে তিনি সর্বশেষ নথিতে তাকে কার্যত একজন ‘অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
যদি মুলারের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই একই অভিযোগ উল্লিখিত হয় অথবা মুলার এই অভিযোগ আদালতে উত্থাপন করেন, তাহলে আগামী কংগ্রেসে তাহলে ট্রাম্পকে নিশ্চিত অভিশংসনের মুখে পড়তে হবে।