চীন কখনো বিশ্বে প্রভাব বিস্তার বা আধিপত্য করার চেষ্টা করবে না। অন্য দেশের অর্থে উন্নত হবে না। কোনো দেশের কর্তৃত্ব বা হুকুমও মেনে নেবে না। নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েই অর্থনীতিতে চীন এমন অলৌকিক উন্নতি ঘটাবে, যা পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবে।
দুনিয়া কাঁপানো অর্থনৈতিক সংস্কারের চার দশক পূর্তি উপলক্ষে দেয়া ভাষণে মঙ্গলবার এসব কথা বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাত্র ৪০ বছর পরে চীন প্রকৃতপক্ষে ইতিমধ্যে অর্থনীতিতে অলৌকিক অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং প্রতিনিয়তই বিশ্বকে নতুন নতুন চমক দেখাচ্ছে। এদিন সেই ধারা অব্যাহত রাখার প্রতিই জোর দেন জিনপিং।
তবে চীনের ক্রমবর্ধমান জটিল অর্থনৈতিক সমস্যা যেমন দুর্বল প্রবৃদ্ধি, বর্ধিষ্ণু ঋণ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ মোকাবেলায় শক্ত কোনো নীতি বা পরিকল্পনার বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি। মঙ্গলবার সিএনএন, আলজাজিরা ও বিবিসির প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
চীনের প্রয়াত নেতা দেং জিয়াওপিং চার দশক আগে অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু করেছিলেন এবং বিশ্বের জন্য চীনের বাজার উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। এর বদৌলতেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটিয়ে চীন বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে।
বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’ এ এদিন প্রায় ৮০ মিনিট ভাষণ দেন জিনপিং। এ ভাষণ এমন একটা সময়ে দিলেন যখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বেশ চাপের মুখে রয়েছে বেইজিং।
ভাষণে তিনি তার দেশের মানুষের ‘কঠোর শ্রম, প্রজ্ঞা ও সাহসিকতা’র প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে ১৯৭৮ সালে দেং জিয়াওপিংয়ের ‘সংস্কার ও এগিয়ে চলার’ যুগ থেকে এ পর্যন্ত যত অর্জন তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন তিনি।
জিয়াওপিংয়ের শুরু করা অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্যদিয়ে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে দেশটি। কোটি কোটি মানুষ দরিদ্রমুক্ত হয়েছে। বাইসেলের সংখ্যা কমে গিয়ে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা। বেড়েছে মিলিয়নিয়ার ও বিলিয়নিয়রের সংখ্যা।
১৯৭৮ সালে যেখানে বেইজিংয়ের রাস্তায় গাড়ি খুঁজে পাওয়া যেত না সেখানে বর্তমানে দেশটির নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ৩০ কোটি। বর্তমানে দেশটির জিডিপি (২০১৭ সালের হিসাবমতে) ১২ লাখ কোটি ডলার। মাথাপিছু আয় ১৬ হাজার ৭৬০ ডলার।
এদিন অনুষ্ঠানে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রায় সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। অনলাইন ব্যবসা উদ্যোগ আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা বিলিয়নিয়র জ্যাক মার মতো কয়েকশ’ জনকে দলের নতুন সদস্য হিসেবে বরণ করে নেয়া হয়।
দলের এ সদস্যদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে চীনের অর্থনীতির উদাহরণ ও ব্যক্তিগত কোম্পানির আরও বিস্তার অব্যাহত রাখার শপথ নিয়েছেন জিনপিং। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্য উদ্যোগ আরও শক্তিশালী করার ওপর জোন দেন।
তিনি বলেন, অতীতে গৃহীত নীতি থেকে কোনো পিছুটান নয়।
চীন তার আপন পথেই অগ্রগতির দিকে এগোবে বলে জানান তিনি। শক্তিমত্তা যতই বাড়ুক বিশ্বে কারও ওপর চীন প্রভাব বিস্তার করবে না জানিয়ে জিনপিং বলেন, চীনের উন্নয়ন কোনো দেশের জন্যই হুমকি নয়।