মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থের দাবি পূরণ নিয়ে কোনো সুরাহায় পৌঁছতে পারেনি বলে ও সরকারের খরচের বিল পাস ছাড়াই কংগ্রেস স্থগিত করায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার অচল হতে যাচ্ছে।
আজ শনিবার থেকে এ অচলাবস্থা কার্যকর হচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা ও উভয় পার্টির কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্য দিয়ে চলতি বছরে তৃতীয়বারের মতো অচল হতে যাচ্ছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কতদিন এটা স্থায়ী হতে পারে তা পরিস্কার না।
শুক্রবার রাতে ট্রাম্প বলেছেন, এই অচলাবস্থা বেশিদিন থাকছে না। যদিও দীর্ঘস্থায়ী হলেও তাতে তার সরকার প্রস্তুত রয়েছে।
এতে ক্রিসমাসের ছুটির আগে কেন্দ্রীয় সরকারের আট লাখ কর্মচারীকে পয়সা ছাড়াই কাজ করতে কিংবা কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে।
অচলাবস্থা নিরসনে কোনো ভূমিকা ছাড়াই শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে।
আজ শনিবার ফের অধিবেশন শুরুর কথা রয়েছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের সব বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের একটি বিল অনুমোদন করেছিল।
মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ট্রাম্প বিলটিতে সই করতে অস্বীকৃতি জানান। ট্রাম্প ওই বাজেট বিলে দেয়াল নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত ৫৭০ কোটি ডলার অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্টের এ চাহিদার সঙ্গে পার্লামেন্ট সদস্যদের মতবিরোধে চলতি বছর তৃতীয়বার সরকার অচলের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এ দফার অচলাবস্থা স্বরাষ্ট্র, যাতায়াত, কৃষি, পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় এবং ন্যাশনাল পার্ক অ্যান্ড ফরেস্ট বিভাগের লাখ লাখ কর্মীকে বেকার করবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান আধিপত্য থাকার পরও দেয়াল নির্মাণে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পেয়ে ট্রাম্পের ক্রুদ্ধ হওয়ার পেছনে ভয়ও কাজ করছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে জিতে ডেমোক্রেটরা প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পাওয়ায় আগামী বছরের শুরু থেকে নিম্নকক্ষে যে কোনো বিল অনুমোদন করাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বেশ বেগ পেতে হবে।
প্রতিনিধি পরিষদে অনুমোদন পাওয়ার পর প্রেসিডেন্টের সইয়ের জন্য বাজেট বিলটিকে সিনেট ঘুরে যেতে হবে, সেখানে পেতে হবে ন্যুনতম ৬০ ভোট।
উচ্চকক্ষে রিপাবলিকানরা সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় বাজেট অনুমোদনে ডেমোক্রেট সিনেটরদেরও সায় লাগবে।
শুক্রবার এ নিয়েই দিনভর উত্তেজনা চলে ক্যাপিটল হিলে। ডেমোক্রেটরা যদি সহায়তায় রাজি না হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের অচলাবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে বলেও সতর্ক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
টুইটারে মেক্সিকো সীমান্তে নির্মাণ করতে চাওয়া দেয়ালটির একটি নকশাও দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে সীমান্তে ওই দেয়াল নির্মাণ এবং এর খরচ মেক্সিকোর কাছ থেকে আদায়েরও প্রতিশ্রুতি ছিল তার।
মেক্সিকো শুরু থেকেই দেয়াল নির্মাণের অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতারাও বলছেন, মার্কিন জনগণের করের টাকায় ট্রাম্পকে দেয়াল নির্মাণ করতে দেয়া হবে না।
গতকাল শুক্রবার একেবারে শেষ মুহুর্তে কংগ্রেস সদস্যরা অচলাবস্থা কাটাতে একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
এ সংকটের জন্য বিরোধীদের দায়ী করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আজ রাতে সরকার অচল হোক কিংবা না হোক, সব দায় ডেমোক্রেটদের। আমাদের প্রত্যাশা সরকার অচল হবে না। কিন্তু দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
সিনেটররা সাংবাদিকদের বলেছেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনারসহ হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পর্দার আড়ালে আলোচনা চালিয়েছে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ।