আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সঠিক সময়ে ছাড়পত্র ও ভিসা দিয়ে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের আসতে দিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি হতাশা ব্যক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র যে বিবৃতি দিয়েছিল তার জবাব দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিবৃতিতে ‘যথাযথ সময়ের মধ্যে পরিচয়পত্র ও ভিসা দিতে পারেনি’ মর্মে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ওই বিবৃতি দিয়েছিল।
ওই বিবৃতির জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ রোববার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিত দিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন পরিচালনা করছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন, যা একটি সাংবিধানিক ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবেন তা নির্ধারণ করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির বিধিবিধান রয়েছে। পর্যবেক্ষণে ইচ্ছুক ‘এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস’ (এএনএফআরইএল) যে তাদের আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে, তা একেবারেই তাদের নিজস্ব বিষয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধন থাকা সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত ১১৮টি স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রায় ২৬ হাজার পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে। আবেদনকারীদের মধ্যে ১৭৫ জন বিদেশি পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দেওয়া হয়ে গেছে এবং বাকিদের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এএনএফআরইএলের প্রায় অর্ধেক পর্যবেক্ষক অনুমোদন পেয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘অধিকারের’ মাত্রাহীন পক্ষপাতিত্ব সবারই জানা। অক্টোবর ও ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদন ছাড়া আরও অনেক প্রতিবেদনে এই পক্ষপাতিত্বের প্রমাণ স্পষ্ট। তাছাড়া, অধিকারের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বিএনপি-জামায়াত সরকারের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এর ভিত্তিতেই অধিকার ও তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিখেছে, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশ তার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে সহযোগী ও বন্ধুদের কাছ থেকে আসা গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাবে।
উল্লেখ্য, ব্যাংকক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংখ্যা এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (এনফ্রেল) তাদের ৩২জন প্রতিনিধি পাঠানোর কথা জানিয়েছিল। তবে যথাসময়ে ছাড়পত্র ও ভিসা না দেয়ায় তাদের সংগঠনগুলোও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার কথা জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা না করায় এনফ্রেল নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। ব্যাংকক ভিত্তিক হলেও এই সংস্থাটিকে অর্থায়ন করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট।
বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ওই মিশন চালাতে অর্থায়ন করেছিল। কিন্তু যথাসময়ে পরিচয়পত্র ও ভিসা না পেয়ে আনফ্রেল তাদের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।
এর আগে ডিসেম্বরের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছিল, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে এবং স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সহায়তা করবে।
দেশীয় কয়েকটি পর্যবেক্ষণ সংস্থায় আর্থিক সহায়তা করলেও সরকারি পর্যবেক্ষক পাচ্ছে না যুক্তরাজ্য, সুইডেন, নরওয়ে বা ডেনমার্ক।