রাজধানীবাসী ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেলে চড়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও যেতে পারবেন। আর মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেনে চলাচল করতে অপেক্ষা করতে হবে আরও এক বছর। অর্থাৎ, ২০২০ সালের মধ্যে রাজধানীবাসী পুরোদমে মেট্রোরেলে যাতায়াতের সুবিধা পাবেন। এতে করে নিত্যদিনের যান ভোগান্তি থেকে অনেকটাই মুক্তি মিলবে রাজধানীবাসীর।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্ধারিত সময়ের (২০০৪ সাল) চার বছর আগেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হতে যাওয়া মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পরে কমবে যানযট, কম খরচে কম সময়ে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। মেট্রোরেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
জানা যায়, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা তৃতীয় ফেজ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নির্মাণকাজ আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। আর মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পটি চালু হলে প্রতি চার মিনিট পরপর এক হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় চলাচল করবেন প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটেরও কম।
গত ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অংশের কাজের অগ্রগতি ৩১ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত সার্বিক বাস্তব গড় অগ্রগতি ২০ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) খান মো. মিজানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের লাইন-৬ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্প। এই প্রকল্পটি প্রথমে ২০১২-২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিশেষ উদ্যোগে প্রথম পর্যায়ে উত্তরা তৃতীয় ফেজ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।
আর মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। এই লক্ষ্য পূরণে নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এর সার্বিক বাস্তব গড় অগ্রগতি ২০ দশমিক ৩৮ শতংশ। আর উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৩১ দশমিক ১ শতাংশ।
গত ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতিকে আটটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- প্যাকেজ-১ (ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন) এর বাস্তব কাজ ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের ৯ মাস আগে গত ৩১ জানুয়ারি এর কাজ শেষ হয়।
প্যাকেজ-২ (ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ) এর কাজ গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুসারে আগামী বছরের ৩০ জুন এই প্যাকেজের কাজ শেষ হবে। বর্তমানে এর বাস্তব অগ্রগতি ২২ শতাংশ। আর আর্থিক অগ্রগতি ২০ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
প্যাকেজ-৩ ও ৪ (উত্তর নর্থ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণ) এর কাজ গত বছরের ১ আগস্ট শুরু হয়েছে। সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুসারে কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সবগুলো টেস্ট পাইল ও চেক বোরিং সম্পন্ন হয়েছে। মোট ২ হাজার ৩২৭টি বাণিজ্যিক পাইলের মধ্যে ২ হাজার ৩০৬টি, মোট ৭৬৬টি পাইলক্যাপের মধ্যে ৩৩৩টি, মোট ৪৪৮টি পিয়ার হেডের মধ্যে ১২৯টি এবং ৪ হাজার ৫৭৭টি প্রিকাস্ট সেগম্যান্টের মধ্যে এক হাজার ৬৩টির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ৮৪০ মিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। এই অংশের বাস্তব অগ্রগতি ২৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।
প্যাকেজ-৫ এ আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৩.২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৩টি স্টেশন নির্মাণে গত ১ আগস্ট কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এ অংশে পরিসেবা স্থানান্তর ও স্টেশন ভায়াডাক্ট এরিয়ার চেকবোরিং সম্পন্ন হয়েছে। এর বাস্তব অগ্রগতি ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
প্যাকেজ-৬ এ কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪.৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৪টি স্টেশন নির্মাণের কাজ গত ১ আগস্ট শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্টেশন ও ভায়াডাক্ট এরিয়ার চেকবোরিং সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে শাহবাগ হয়ে রাজু চত্বর পর্যন্ত পরিসেবা স্থানান্তরের কাজ চলমান আছে। এর বাস্তব অগ্রগতি ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
প্যাকেজ-৭ এ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেম সরবরাহ ও নির্মাণকাজ গত ১১ জুলাই শুরু হয়েছে। বর্তমানে হাইভোল্টেজ ফিডার ক্যাবল রুট সার্ভে ও আন্তঃপ্যাকেজ সমন্বয়ের কাজ চলছে। এর বাস্তব অগ্রগতি ৪ শতাংশ।
প্যাকেজ-৮ (রোলিং স্টক-রেল কোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ)-এর কাজ শুরু হয়েছে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর। সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুসারে আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে উত্তরা তৃতীয় ফেজ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেল চালুর বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এই অংশের কাজ চলছে। এর বর্তমান অগ্রগতি ১৩ শতাংশ।