আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবশেষে মহাজোটের অর্ধশতাধিক আসনে একক প্রার্থীর বিষয়ে সমঝোতা করেছে আওয়ামী লীগের বিশেষ টিম। নির্বাচনী আসন ধরে ধরে এক সপ্তাহ ধরে কাজ করছেন এ টিমের সদস্যরা।
বুধবার পর্যন্ত এসব আসনে সমঝোতা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে বাকি আসনে একক প্রার্থী নির্ধারণ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন টিমের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক।
চার সদস্যের এ টিমের অন্যরা হলেন-যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বিএম মোজাম্মেল হক।
এদের একাধিক ব্যক্তি মত ও পথকে জানিয়েছেন, আড়াই শতাধিক আসনে মহাজোটের একাধিক প্রার্থী এখন নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এদের অনেকে ১৪ দলের শরিকদের প্রার্থী যারা নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
মহাজোট নির্ধারিত একক প্রার্থীর আসনেও প্রার্থিতা করছেন অনেকে। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি জোটগতভাবে ২৯ আসন পেলেও প্রার্থী দিয়েছে ১৭৭ আসনে। আবার মহাজোট শরিকদের কয়েকটি আসনে নৌকার প্রার্থীও রয়েছে। ভোট ভাগের শঙ্কা থেকে একক প্রাথী নির্ধারণে চাপ দেয়া হচ্ছে জোটের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করা প্রার্থীদের ওপর।
আবদুর রহমান মত ও পথকে বলেন, মহাজোটের সিদ্ধান্তের বাইরে প্রায় ৩০০ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টিরই রয়েছে ১৪৮ জন। অর্ধশতাধিক প্রার্থী রয়েছে ১৪ দলের। এদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
অর্ধশত প্রার্থী এরই মধ্যে জোটের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়াতে সম্মতি দিয়েছে। অনেকে ঘোষণাও দিয়েছেন। বাকিদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি, আলোচনা শেষ হবে। কাল সব আসনে একক প্রার্থীর ঘোষণা দিতে পারব।
জাহাঙ্গীর কবীর নানকের নেতৃত্বে মঙ্গলবার একটি প্রতিনিধিদল কুড়িগ্রাম সফর করে। সেখানে চার আসনের তিনটিতেই মহাজোটের একাধিক প্রার্থী রয়েছে।
কুড়িগ্রাম-৩ আসনে প্রার্থীদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করা হয়। পরে এক নির্বাচনী সমাবেশে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সমর্থনের কথা জানিয়ে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেন ডা. আক্কাস আলী।
জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবীর নানক ওই দিন বলেন, আমরা পরিকল্পনা করেছি- শুক্রবারের মধ্যে সব আসনে একক প্রার্থী নির্ধারণ করব। সে লক্ষ্যে কাজ করছি। যেখানে ফোনে কাজ হচ্ছে না সশরীরে হাজির হচ্ছি। প্রার্থীদের মধ্যেও আমরা সমঝোতার একটি ইতিবাচক দিক লক্ষ্য করছি। আশা করি আমরা পারব।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার গুলশান, কামরাঙ্গীরচর; সিলেট, রংপুর ও গোপালগঞ্জে নির্বাচনী জনসভা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রংপুর, সিলেট ও গুলশানে মহাজোটের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। জনসভার অগ্রবর্তী টিম হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে গিয়ে প্রার্থীদের নিয়ে বিশেষ সমন্বয় সভা করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একক প্রার্থী নির্ধারণে সফলতা এসেছে।
এ ছাড়া নড়াইল, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, পিরোজপুরসহ ১০ স্থানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচনী জনসভা করেছেন শেখ হাসিনা। সেগুলোতে বিশেষ টিম একক প্রার্থী নির্ধারণে কাজ করেছেন।
সূত্র জানায়, নড়াইল-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট খন্দকার কায়েকুজ্জামান ফিরোজ তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সমর্থন জানিয়েছেন।
জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর) আসন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী মো. আবুল কাশেম রিপন।
হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু আতিকুর রহমান আতিক।
নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন, পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনোয়ার হাওলাদার, ময়মনসিংহ-৭ আসন থেকে রওশন এরশাদ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
সিলেট-৪ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমানের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।