‘উন্নয়নের তক্কে, রবিউলের পক্ষে’ : শরাফত হোসেন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণের আর মাত্র তিন দিন বাকি। নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে আনুষ্ঠানিকতা চলছে পুরোদমে। ভোটের মাঠে প্রার্থীরাও বসে নেই। নানান সমীকরণে তারা ছুটছেন ভোটারদের দোরগোড়ায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিত্রও ব্যতিক্রম নয়।

একজন সাধারণ ভোটার হিসেবে আমার ভোট কাকে দেবো, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ব্যক্তিগত দায় থেকে কিছু প্রশ্নের জবাব খুঁজেছি। কাকে ভোট দেবো? কেন দেবো?

আমার নির্বাচনি এলাকা ২৪৫ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩)। এখানে প্রার্থী হিসেবে আছেন মহাজোট থেকে আওয়ামী লীগের র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (নৌকা), ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপির মো. খালেদ হোসেন মাহবুব (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি থেকে আবদুল্লাহ আল হেলাল (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছৈয়দ আনোয়ার আহম্মদ লিটন (হাতপাখা), খেলাফত আন্দোলনের মুজিবুর রহমান হামিদী (বট গাছ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মোহাম্মদ জুনায়েদ আল হাবীব (খেজুর গাছ), জাকের পার্টির সেলিম কবির (গোলাপ ফুল), সিপিবি’র শাহরিয়ার মো. ফিরোজ (কাস্তে), ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের সৈয়দ মাহমুদুল হক আক্কাছ (টেলিভিশন) ও মো. আবু হানিফ (সিংহ)।

দশম সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে ২,৬৮,০২৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। ওই সময় মোট ভোটার ছিলেন ৪,৪৫,০৯৯ জন। এবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫,১৫,০১১। গত তিনটি নির্বাচনের (উপ-নির্বচনসহ) ফলের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, নতুন ভোটাররা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকেই বেছে নিচ্ছেন। এটা আশার কথা।

কাজের প্রয়োজনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাইরে অবস্থান করছি। ফলে যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থান করছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিবর্তন (ইতিবাচক-নেতিবাচক) স্বচক্ষে প্রতিনিয়ত দেখছেন, তাদের মতের সঙ্গে বাইরে থেকে দেখা আমাদের দৃষ্টি মিলিয়ে নিতে চেয়েছি। সেই অনুযায়ী প্রতি শুক্রবার ছুটির দিনগুলোতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সময় কেটেছে আমার। কথা বলেছি নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। তাদেরই একজন বিঞ্চুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফারুক আহমেদ। তিনি জানালেন, গত ৮-১০ বছরে বিজয়নগরে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা অতীতে কেউ ভাবেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান সবক্ষেত্রে বিজয়নগরের অবস্থা আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় ভালো। ঢাকা থেকে বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা অপু সরকার ফোন করে জানালেন, তার বাড়ির পাশে কাঞ্চনপুরের গলির রাস্তাও এখন পাকা। প্রায় তিন বছর পর তিনি এই রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে অবাক হয়ে ফোন করে জানালেন মুগ্ধতার কথা।

চম্পকনগরে রাকিব, মিরাসানীতে নাঈম, চাউরাতে জনি হক, বুধন্তীর ওয়ালিউল, ইসলামপুরে সজল, মজলিশপুরে পাভেল, সুহিলপুর বাজারে মোজাম্মেল ভূঁইয়া, ঘাটুরায় তুহিন, ভাতশালা গ্রামে শাকিল; এমন অনেক নাম এই লেখা লিখতে গিয়ে মনে পড়ছে। সবার কণ্ঠে ছিল প্রায় একই অভিব্যক্তি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই উন্নয়নযজ্ঞ সত্যি বলতে আমাকেও মুগ্ধ করেছে। এতটা পথ না ঘুরলে হয়তো এমন করে জানা হতো না প্রিয় শহরকে।

অদ্বৈত’র তিতাস হয়তো প্রাণ ফিরে পাবে এই উন্নয়ন যাত্রায়। আমি অন্তত এই স্বপ্ন দেখি। তিতাস নদী খননের কাজ চলছে। নদীর খনন করা মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ ও আশপাশের নিচু এলাকা ভরাট করা হবে। এতে নদীর গভীরতা ও পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, এমনটাই উল্লেখ আছে স্থানীয় প্রচার মাধ্যমে। সবচেয়ে আশার কথা, মাদক-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি অনেকাংশে কমে এসেছে। আগামীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সত্যিকার অর্থেই সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, এমনটাই প্রত্যাশা।

খোঁজ নিতে গিয়ে উন্নয়ন কাজের যেই চিত্র জেনেছি তার আংশিক উল্লেখ করছি:

* শতভাগ বিদ্যুতায়ন।
* শেখ হাসিনা তিতাস সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বিজয়নগরের সঙ্গে শহরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন।
* বিজেশ্বর গ্রামের কাঙ্ক্ষিত ছাইল্লা বিলের খাল খনন।
* ৩৯৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ।
* ৭৭১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন সংস্কার ও নতুন ভবন নির্মাণ।
* ৫৫টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন
* ৬৭৩টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, ৯৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ ও ৫৬৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সরবরাহসহ জেলার ২ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষা সহায়তা প্রদান।
* প্রাথমিক পর্যায়ে ১৫১২ জনে শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়েছে।
* ৬৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ।
* জেলায় ১৩৭৪ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ।
* সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ জেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ইত্যাদি নির্মাণ।

এসব তথ্য বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ও লোকমুখে জেনেছি। তথ্য বিভ্রাট হয়ে থাকলে পাঠকের সহযোগিতা চাই। কিন্তু এটা স্পষ্ট, যাদের কাছে শুনেছি প্রায় সবার চোখে দীপ্তি দেখে নিজেও পুলকিত হয়েছি। মনে পড়ে যায়, গত কোরবানির ঈদের সময় মণিপুরের এক বিক্রেতার কাছ থেকে গরু কিনেছিলাম। বাসা পর্যন্ত গরু পৌঁছে দিতে লোকটি এসেছিলেন। পথে আমাদের অনেক কথা হয়। সামনে নির্বাচন, তাই কাকে ভোট দেবেন জিজ্ঞেস করতেই তিনি নানান উন্নয়নের ফিরিস্তি দিলেন তার ভাষায়। কথায় কথায় জানালেন, ‌‘উন্নয়নের তক্কে, রবিউলের পক্ষে’।

২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ। একই সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এই সময়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় কারা থাকবে বিষয়টি ঘুরেফিরে আসছে। আওয়ামী লীগ উন্নয়নযাত্রা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর কাছে সুযোগ চায়। অন্যদিকে ক্ষমতা থেকে ১০ বছর বিচ্ছিন্ন আছে বিএনপি। তাদেরও চাওয়া ক্ষমতায় ফিরে আসা। সেজন্য ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। জামায়াতও যার অংশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের নেতৃত্ব তাহলে আমরা কার কাছে তুলে দেবো?

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে