একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট একেবারে দোড়গোড়ায়। বাকি আর মাত্র ২ দিন। দেশজুড়ে ভোটের উত্তেজনা। তবে এই উত্তেজনার মধ্যে নিশ্চিন্ত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে কলকাতার আনন্দবাজারকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, এবারও আওয়ামী লীগ জিতবে।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে সুধাসদন ভবনে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণের উপর আমার বিপুল আস্থা। তারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। জনগনের ভোটেই আমরা আবার নির্বাচিত হব।
এতটা নিশ্চিত কী ভাবে হচ্ছেন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রায় ৬০০ স্কুল পোড়ানোর কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। মুছে যায়নি প্রিসাইডিং অফিসারসহ অজস্র নাগরিককে হত্যার স্মৃতি। রাস্তা কেটে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সেই সময়ে জনগণই রুখে দাঁড়িয়েছিল। তারা ভোটও দিয়েছিল। সেই জনগণ আবার আমাদেরই ভোট দেবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পরে দেশে একের পর এক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ সে সব ভোলেনি। ভোলেনি বলেই ওই সব ঘটনা যে রাজনৈতিক দল ঘটিয়েছিল, তারা জনসমর্থনহীন হয়ে পড়েছে। সেই জোরের জায়গা থেকেই ফের সরকার গঠনের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামী লীগ।
কিন্তু নির্বাচনের আগে বিরোধীরা তো আপনাদের দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছে। এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনার উত্তর, নালিশ করার পাশাপাশি বিভ্রান্তি ছড়াতে এবং মিথ্যা কথা বলতে তারা ভীষণ পারদর্শী। নির্বাচনে বিরোধীদের হয়ে যারা প্রার্থী হতে চেয়েছেন, তাদেরই ওরা নমিনেশন দিয়েছে। কিন্তু দলীয় প্রতীক পেয়েছেন এক জন। এরপর নিজেদের মধ্যেই সঙ্ঘাত শুরু হয়েছে। দলের পুরনো বা জিতবেন এমন নেতাদের নমিনেশন দেয়নি তারা। যে কারণে বঞ্চিতদের কাছে ওদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে। কয়েক জন নেতাকর্মীকে খুনের ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ার পর সে বিষয়ে তদন্ত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায় আওয়ামী লীগ সম্পর্কে খুবই উৎসাহী। বাংলাদেশে মানুষের মন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাই মুছে ফেলা হয়েছিল। এখনকার নতুন প্রজন্মের মধ্যে সত্যকে জানার একটা আগ্রহ রয়েছে। ইন্টারনেটে খুঁজলেই একাত্তরের অনেক তথ্য এখন জানা যায়। ফলে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিষয়টি এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে।যার কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি যুব সম্প্রদায়ের মতটাই পাল্টে গেছে।
নির্বাচন উপলক্ষে শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছেন। সেই সফরে তিনি মানুষের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছেন বলে এদিন দাবি করেন।
তার কথায়, মানুষের মধ্যে সেই ভালবাসাটা দেখতে পেলাম জানেন! তারা অন্তর থেকে চাইছে, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। জনগণ এটা জানে, আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই তাদের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে।
নারীদের থেকে তো বটেই, আওয়ামী লীগ তরুণ সমাজের কাছ থেকেও অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনটা আগের মতো চ্যালেঞ্জিং নয়। বৈরীতার পরিবেশও নেই। বরং আমাদের পক্ষে একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর আগের নির্বাচনগুলোয় একটা বিভেদ লক্ষ করতাম। এবার কিন্তু একচেটিয়া সবার সমর্থন আমাদের প্রতি।সেটা টেরও পাচ্ছি।
মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক পাকিস্তান প্রসঙ্গেও সাক্ষাৎকারে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
তার দাবি, বাংলাদেশে কিছু পাকিস্তানপ্রেমী মানুষ আছেন। যাদের মন পড়ে আছে পাকিস্তানে। তবে আমরা সতর্ক। কারও সঙ্গে বৈরীতা করতে না চাইলেও, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাউকে নাক গলাতে দেবে না বাংলাদেশ।
বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত যে আসামিরা লন্ডনে বসে আছেন, তাদের সম্পর্কেও আওয়ামী লীগের মনোভাব স্পষ্ট হয় শেখ হাসিনার কথায়।
তার মতে, ওই সব আসামিরা সব সময় বিদেশে বসে দেশের ভেতর একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চায়। অস্ত্র পাচার, চোরা কারবার এবং দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ওই সব মানুষ অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন।
তার দাবি, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাতে যারা সুযোগ সুবিধা পেয়েছে, সেই সব ব্যবসায়ীরাও ওই দলকে টাকাপয়সা দেয়। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ না করলেও নিজেদের আখের তারা গুছিয়ে নিয়েছে। ওই টাকা তারা এখন ব্যয় করে দেশের ভেতরে অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে।ব্রিটেনের সঙ্গে কথা বলে ওই আসামিদের দেশে ফেরত এনে রায় কার্যকর করা হবে।
এবারের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলাম কীভাবে ধানের শীষ প্রতীক পেল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা।
তার প্রশ্ন, যাদের নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করল, তাদের কীভাবে নমিনেশন দেয়া হল? জামায়াত তো গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবি হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। দেশের নারীদের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল, ঘরবাড়ি দখল করেছিল। ওদের নমিনেশন দেয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ শঙ্কিত।
কামাল হোসেনের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কামাল হোসেনকে দেশের সংবিধান রচয়িতা বলা হয়। তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে নিজে দল গঠন করেন। ধানমন্ডি থেকে দাঁড়িয়েছিলেন একবার। ওই নির্বাচনে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। সেই তিনি কিনা গেলেন জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে। তবে অবাক হইনি। কারণ উনার শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে। ছেলেদের একটু শ্বশুরবাড়ির টানটা বেশি থাকে।
ভোটের ফল কেমন হবে প্রশ্নে শেখ হাসিনা জানান, ওই যে প্রথমেই বলেছিলাম, আওয়ামী লীগই আসছে। কারণ মানুষ আমাদেরই চাইছেন।
সূত্র: আনন্দবাজার