একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা আজ শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে। এখন ভোটের অপেক্ষা। আর মাত্র একদিন পর ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ৩০০ সংসদীয় আসনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সার্বিক নিরাপত্তার ছক তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রতীক বরাদ্দের পরপরই সারাদেশে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয়েছিল প্রচার-প্রচারণা। সেই উৎসবের সমাপ্তি ঘটেছে আজ সকাল ৮টায়। এখন শুধু শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের অপেক্ষায় আছেন নির্বাচন কমিশন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভোটাররাও অপেক্ষায় আছেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তার ভোটটি ঠিকভাবে দেয়ার জন্য।
নির্বাচন কমিশনও তার সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। দেশের প্রায় সব নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে গেছে ব্যালট পেপার। আইনগত জটিলতার কারণে সীতাকুণ্ড আসনে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে আজ। দেশের মোট ৬টি আসনে ভোট হবে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন)।
ইসি সূত্রে জানা যায়, এবারের সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলই অংশ নিচ্ছে। দীর্ঘ ১০ বছর পর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে রাজনীতিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তারা উভয়ই জোটবদ্ধভাবে ভোটে অংশ নিয়েছে। একক দল হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা) সবচেয়ে বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে দলটির ২৯২ জন প্রার্থী রয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল ও জোট মিলিয়ে ২৭২ জনকে নৌকা প্রতীক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এসব প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা আছেন ২৫৮ জন। বাকিরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর। তাদের বাইরে জোট শরিক জেপির দুজন নিজস্ব প্রতীকে (বাইসাইকেলে) ভোট করবেন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়া জাতীয় পার্টি ২৬টি আসনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া আলাদাভাবে লাঙ্গল প্রতীকেও নির্বাচন করছেন দলের অনেক প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের ২৫৮ জনের পাশাপাশি ওয়ার্কার্স পার্টির পাঁচ, জাসদের তিন, তরিকত ফেডারেশনের দুই, বাংলাদেশ জাসদের এক ও বিকল্পধারার তিনজন নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন।
অপরদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের জন্য ৫৯টি আসনে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা পেয়েছে ১৯টি আসন। ২০ দলীয় জোটের শরিকরা পেয়েছে ৪০টি আসন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে গণফোরাম পেয়েছে সাতটি আসন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি চারটি, নাগরিক ঐক্য চারটি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ পেয়েছে চারটি আসন।
অন্যদিকে, ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে জামায়াত ২২টি, এলডিপি ৫টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর নিবন্ধিত অংশ ৩টি ও অনিবন্ধিত অংশ ১টি, খেলাফত মজলিসের ২টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি, এনপিপি ১টি, পিপিবি ১টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ২টি এবং লেবার পার্টি ১টি আসন পেয়েছে।
এই তালিকার বাইরে দুটি আসনে বিএনপির সঙ্গে উন্মুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জামায়াত।
৬ আসনে ইভিএমে ভোট :
৩০০টি আসনের মধ্যে এবার ৬টিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হবে। আসনগুলো হলো ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, খুলনা-২, রংপুর-৩ ও সাতক্ষীরা-২।
ভোটের প্রস্তুতি :
নির্বাচনী প্রস্তুতি বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইসি কমিশনার শাহাদাত হোসেন বলেন, শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় প্রচারণা শেষ হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। এই মুহূর্ত পর্যন্ত যতটা প্রস্তুতি দরকার, সেটা আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি। নির্বাচনী সামগ্রীসহ ব্যালট পেপার অনেক আসনে পৌঁছে গেছে। বাকি এলাকাগুলোতে ব্যালট পেপার যেতে শুরু করেছে।
অপরদিকে নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কায় সব সরকারি ও সামরিক হাসপাতাল জরুরি সেবাদানের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। একইসঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সগুলোও স্ট্যান্ডবাই রাখতে বলা হয়েছে।