আগামীকাল বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। তারপরেই গঠিত হবে নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ।
আগামী রোববারই শপথ গ্রহণ করতে পারেন নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী সূত্র থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আগেই মন্ত্রিসভার শপথ হতে পারে। এর আগে সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশিত হবে এবং তারা শপথ নেবেন। গেজেটের পর শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদে স্থান পেতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সু-নজরে থাকার চেষ্টা করছেন দলটির নেতারা।
গত সোমবার সকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গিয়ে দেখা করেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। আওয়ামী লীগ সভাপতিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি মূলত তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাই করেছেন নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির মধ্যম সারির এক নেতা বলেন, নির্বাচনের আগের দিন নেত্রীর কার্যালয়ের সামনে এত লোক ছিল না যত লোক নির্বাচনের পর দিন থেকে গণভবনে গিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। মন্ত্রিপরিষদের শপথের আগ পর্যন্ত হয়তো নেত্রীর কার্যালয়ে কিছু লোকজন আসা যাওয়া করবে, তারপর আবার কমে যাবে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে এখন আলোচনা মন্ত্রিপরিষদে স্থান পাচ্ছেন কারা? কেউ কেউ মনে করছেন এবার মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ পড়ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সংসদ নির্বাচন না করায় তার পরিবর্তে বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের অর্থমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণমন্ত্রী করার কথাও শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে, নতুন কেউ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাবেন। আর লোটাস কামাল অর্থমন্ত্রী হলে এম এ মান্নান প্রতিমন্ত্রীই থাকছেন।
দলটির হাইকমান্ড সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তবে কেউ যদি বার্ধক্যজনিত কারণে দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে পরিবর্তন হতে পারে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কেউ কেউ বলছেন। সেক্ষেত্রে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম কিংবা টেকনোক্রেট কোটায় একজন বিশিষ্ট চিকিৎসকের মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে সূত্রগুলো দাবি করছে।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অসুস্থতাজনিত কারণে মন্ত্রিপরিষদে স্থান নাও পেতে পারেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। পূর্বের ন্যায় এই মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই থাকবে। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিমন্ত্রীর বিষয়টিও অনিশ্চিত বলেই ধারণা সূত্রগুলোর।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বর্তমান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি স্বপদে থাকছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা জাতীয় পার্টির দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা পূর্ণমন্ত্রী হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে এই মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আসতে পারেন আওয়ামী লীগের কোনো নেতা।
জানা গেছে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পরিবর্তন না হলেও সেখানে প্রতিমন্ত্রী আসতে পারে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও অপরিবর্তীত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বার্ধক্যজনিত কারণে মন্ত্রিপরিষদে পুনরায় দায়িত্ব না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই মন্ত্রীর। অপরিবর্তীত থাকতে পারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা দুই প্রতিমন্ত্রী।
জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বপদে বহাল থাকলেও এই মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করার সম্ভাবনা রয়েছে। একই রকম হতে পারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেও। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী পুনরায় এ দায়িত্ব পেলেও প্রতিমন্ত্রীর বিষয়টি অনিশ্চিত। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপমন্ত্রী পদোন্নতি পেয়ে প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ঢাকা থেকে নির্বাচিত একজন ব্যরিস্টার আসতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিমন্ত্রীর বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত থাকলেও মন্ত্রীর দায়িত্ব পরিবর্তন হতে পারে। পরিবর্তন হতে পারে নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর।
দলটির বিভিন্ন সূত্রের দাবি অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের একজন টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী হতে পারেন। পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত দুই সাংগঠনিক সম্পাদকের একজন হতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী।
দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া দুর্যেোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মন্ত্রী হতে পারছেন না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন এই মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তন নাও হতে পারে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী থাকলেও একটা প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভুমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বার্ধক্যজনিত কারণে দায়িত্ব না পেতে পারেন। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিমন্ত্রীর পদোন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদে স্থান না পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী পুনরায় স্বপদে দায়িত্ব পাচ্ছেন বলেই শোনা যাচ্ছে। তার মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হতে পারেন।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব থাকতে পারেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। তবে তার মন্ত্রণালয় পরিবর্তন হতে পারে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে নতুন যুক্ত হতে পারেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
মন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ইমরান আহমেদ, নাজমুল হাসান পাপন, এ কে এম রহমতুল্লাহ।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শ ম রেজাউল করিম, আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, গোলাম দস্তগীর গাজী, নূর ই আলম চৌধুরী লিটন, দীপংকর তালুকদার, হাবিবে মিল্লাত, জাহিদ আহসান রাসেল, প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ আলোচনায় রয়েছেন।
এ ছাড়া মহাজোটের সরকার হলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জিএম কাদের এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ আসনের পরপর তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মনোনীত করার বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।