আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ থাইল্যান্ড থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সৈয়দ আশরাফুলের লাশবাহী কফিন গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, এনামুল হক শামীম, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সুজিত রায় নন্দীসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ মানবকণ্ঠকে বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহের সঙ্গে দেশে এসেছেন তার ছোট ভাই, দুই বোন ও একমাত্র মেয়ে রীমা ইসলাম। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ ২১ বেইলি রোডে তার সরকারি বাসভবনে নেয়া হয়েছে। রাতে তার মরদেহ রাখা হবে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে। আগামীকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সৈয়দ আশরাফের জানাজা হবে। এর পর হেলিকপ্টারে করে মরদেহ নেওয়া হবে সৈয়দ আশরাফের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়াম মাঠে জানাজা হবে। এরপর দুপুর ২টায় ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাঁ মাঠে জানাজার পর আশরাফের মরদেহ ঢাকায় আনা হবে। বাদ আছর বনানী কবরস্থানে আশরাফুল ইসলামের মরদেহ দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বামরুগ্রাদ হাসপাতালের ১১৩২ নম্বর কেবিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কয়েক মাস ধরে সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। গুরুতর অসুস্থতার কারণে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন তিনি। ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর মারা যান আশরাফ পত্মী শিলা ইসলামও। তিনি থাকতেন যুক্তরাজ্যে। তিনিও ভুগছিলেন জটিল রোগে। স্ত্রী বিয়োগের ব্যাথায় কাতর আশরাফের শরীরেও মারণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিলেও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ নেওয়ার জন্য সময় চেয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আর শপথ নেয়া হলো না তার। স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার পরদিনই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন তিনি।
গত বছরের ৩ জুলাই চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে থাইল্যান্ডে যান আশরাফ। তার শারীরিক অবস্থা সঙ্গীন- এই অবস্থাতেও তাকে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকার প্রার্থী করে আওয়ামী লীগ। আর টানা পঞ্চমবারের মতো তাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে জনগণ জানিয়ে দেয়, তাদের মণিকোঠায় ছিলেন আশরাফ।
১৯৫২ সালে ময়মনসিংহ শহরে জন্ম নেন আশরাফ। রাজনীতিতে জড়ান ছাত্র জীবনেই। ছিলেন অবিভক্ত ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সহ-প্রচার সম্পাদক।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর যুক্তরাজ্য চলে যান আশরাফ। প্রবাস জীবনে তিনি যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ভোটে দাঁড়ান। ওই বছরই প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে জেতেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন তিনি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আশরাফকে নিয়ে নেতিবাচক কোনো খবর নেই। তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরাও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জটিল পরিস্থিতিতে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।