সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালুর চিন্তাভাবনা করছে। ধাপে ধাপে এটা বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা কর্মসূচি চালু রয়েছে।
প্রথম ধাপে এবার জুলাই মাসে ষষ্ঠ শ্রেণী আসবে অবৈতনিক শিক্ষার অধীনে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের মধ্যে মাধ্যমিক স্তর আসবে।
২০২৫ সালের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক বা দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার অধীনে আসবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময়। গত দশ বছরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদানসহ নানা ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। এর সুফলও মিলেছে। মাধ্যমিকে জেন্ডার সমতা শুধু নিশ্চিতই হয়নি, ছাত্রীর সংখ্যা এখন বেশি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ইউরোপের কল্যাণ রাষ্ট্রের মতোই আমরা দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষাদান করতে চাই। এ লক্ষ্যে একটি খসড়া বাস্তবায়ন কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছে।
লেখাপড়ার পেছনে একজন শিক্ষার্থীর দুই ধরনের ব্যয় আছে। একটি প্রাতিষ্ঠানিক। অন্যটি পারিবারিক। পারিবারিক ব্যয়ের মধ্যে আছে খাতা, কলম, জামা-কাপড় ইত্যাদি। অবৈতনিক শিক্ষার ধারণায় সরকার প্রাতিষ্ঠানিক খরচ বহন করবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, সমন্বিত উপবৃত্তি কার্যক্রম ও এসডিজি-৪ (শিক্ষায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) এর আংশিক দিক অর্জনের লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বরে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
৩৬ পৃষ্ঠার ওই প্রস্তাবনায় একছাতা থেকে উপবৃত্তি কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। এতে এমডিজির (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) মতোই আগাম এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়। জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি ২০১৫ সালের মধ্যে অর্জনের কথা থাকলেও ২০১৩ সালেই তা পূরণ করে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষক দল বিস্তারিত গবেষণা করেছে। গবেষণায় ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পেছনের ব্যয় আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়।
এরপর সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণীভিত্তিক মোট কত টাকা সরকার ব্যয় করবে তা বের করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্কুলের টিউশন ফি ও অন্যান্য ব্যয় হিসাবে আনা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত বাস্তবায়ন কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, অবৈতনিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা হলে সরকার দুইভাবে টিউশন ফি সংস্থান করবে।
একটি হচ্ছে, প্রত্যেক স্কুল-মাদ্রাসা একই হারে টিউশন ফি নেবে। সেই ফির অর্থ সরকার শিক্ষার্থীর কাছে পাঠাবে। শিক্ষার্থী তা স্কুলে জমা দেবে। অথবা, ধার্য টিউশন ফি সরকার সরাসরি প্রতিষ্ঠানে পাঠাবে।
এ ক্ষেত্রে সরকার যে টিউশন ফি নির্ধারণ করেছে, সেটি হচ্ছে- ষষ্ঠ শ্রেণীতে ১শ’ সপ্তমে ১৫০ টাকা। অষ্টম শ্রেণী প্রস্তাবিত ফি ২শ’ টাকা। নবম ও দশম শ্রেণীতে যথাক্রমে ৩শ’ ও ৫শ’ টাকা। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে ৫শ’ টাকা। এই ফি হারের নাম দেয়া হয়েছে ‘এসডিজির জন্য প্রস্তাবিত’।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৬ সাল থেকে সরকার একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সরকারি খরচে শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিতের চিন্তাভাবনা করছে। ২০১২ সাল থেকে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির হার বিবেচনা করে দেখা গেছে, এটা ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এটিকে আমলে নিয়ে পরিসংখ্যানবিদরা বলছেন, ২০২৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী হবে ১০ লাখ ১১ হাজার ৭৭৩ জন।
মন্ত্রণালয়ের কৌশলপত্রে দেখা যায়, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য জনপ্রতি টিউশন ফি ৫শ’ টাকা এবং অন্যান্য ফি ২ হাজার টাকা ধরে অবৈতনিক শিক্ষা চালু করতে পারে সরকার। সে ক্ষেত্রে জনপ্রতি বছরে ৮ হাজার টাকা করে সরকারকে সংস্থান করতে হবে।
সরকার বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এমপিও বাবদ অর্থ দিচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে উপবৃত্তি বাবদ মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করে। প্রতিষ্ঠানগুলো এর বাইরে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ টিউশনসহ অন্যান্য ফি বাবদ আদায় করে। কিন্তু সেই অর্থের প্রায় সবই প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে ব্যয় করে।