দেশের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্র এখন বঙ্গভবনে। সেখানেই নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে আগামীকাল সোমবার। কারা হবেন এ মন্ত্রিসভার সদস্য, নতুন কারা আসবেন, কারা বাদ পড়বেন এ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। বিকাল সাড়ে তিনটায় অনুষ্ঠিতব্য ওই শপথ অনুষ্ঠানে কার ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে তা দেখার অপেক্ষায় পুরো জাতি। ফলে ওইদিন পর্যন্ত দেশের ষোল কোটি বাঙালির ৩২ কোটি চোখ থাকবে বঙ্গভবনেই।
মূলত বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানের পর থেকে সম্ভাব্য নতুন মন্ত্রিসভাই রাজনীতির চায়ের কাপে ঝড় তোলা একমাত্র আলোচনা। কারা আসছেন মন্ত্রিসভায় এ নিয়ে দেশজুড়ে চলছে নানা আলোচনা। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এ বিষয়ে কেউ কিছুই জানেন না। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীরা আজ রবিবার দুপুর থেকে বঙ্গভবনে শপথ নেয়ার ফোন পাবেন। অবশ্য সব জানা সত্তে¡ও ঘুম নেই জোর লবিংয়ের ব্যস্ত মন্ত্রী হতে আগ্রহীদের। গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছেন তারা। কেউ কেউ আবার এলাকার উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য স্থানীয় জনগণকে দিয়েই সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্ত্রিত্বের জোরালো দাবি তুলছেন।
মন্ত্রিত্বের আলোচনায় যারা : পুরনো মন্ত্রীদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অবসরে যাচ্ছেন, সেটা তিনি আগেই জানিয়েছেন। এজন্য নির্বাচন থেকে সরেও দাঁড়িয়েছেন তিনি। তবে আবার এও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে আরো এক বছর দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত এই বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ। এ ছাড়া চলতি বাজেটও তার দেয়া। এক্ষেত্রে অর্ধ বছরের বাকি কয়েক মাস মন্ত্রিপরিষদে তার থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে প্রবীণ রাজনীতিবিদ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ যেমন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান, তেমনি জাদরেল মন্ত্রী হিসেবেও তারা দেশে-বিদেশে সুপরিচিত। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক চিফ হুইফ উপাধ্যক্ষ এম এ শহীদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন, ডা. হাবিবে মিল্লাত, এ কে এম রহমতউল্লাহ, আ স ম ফিরোজ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দীপঙ্কর তালুকদার মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন। টেকনোক্র্যাট কোটায় অর্থনীতিবিদ ড. ফরাসউদ্দিনকেও মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করেন। এবারের নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন দলের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বি এম মোজাম্মেল হক। তবে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের নির্বাচন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তারা। ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক এমপি নানক, ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি রহমান, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি নাছিম এবং শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক এমপি মোজাম্মেলের এই ‘ত্যাগ’-কে মূল্যায়ন করে টেকনোক্র্যাট কোটায় তাদের কাউকে কাউকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়ে পুরস্কৃত করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া তরুণ নেতৃত্বের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ কে এম এনামুল হক শামীম, আইনবিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শ ম রেজাউল করিমের নাম আলোচনায় রয়েছে। অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে অন্যতম চমক ছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।
বরাবরই তৃণমূলকে গুরুত্ব দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। অনেকবার সংসদ সদস্য হয়েছেন, কিন্তু আলোচিত কেউ নন, তৃণমূলের এমন কাউকেও মন্ত্রিসভায় স্থান দিতে পারেন শেখ হাসিনা। এর আগে সৈয়দ মহসীন আলীকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী, শাহজাহান কামালকে বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। এ কারণে মন্ত্রিত্বের আলোচনায় নেই এমন কাউকে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে চমক দেখাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ