উপজেলা নির্বাচন : বিএনপির অংশগ্রহণ বিষয়ে দুই মত

বিশেষ প্রতিনিধি

সারা দেশে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আর এ নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে আলোচনা। জানা গেছে, বিএনপির অংশ নেয়ার বিষয়ে রয়েছে দুই মত।

এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী মার্চে উপজেলা পর্যায়ে ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এবারও কয়েক ধাপে এ পর্যায়ের ভোট হবে।

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের একটি অংশ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে উপজেলায় অংশ না নেয়ার পক্ষে। আরেক পক্ষ বিএনপির দলীয় রাজনীতি চাঙ্গা রাখার জন্য এতে অংশ নেয়া উচিত বলে মনে করছেন।

অপরদিকে জোটগতভাবে এই ভোটে অংশ নেয়ার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। তবে ইসি মনে করছে এ ধাপেও বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশ নেবে।

তাদের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করলেও গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণে পোলিং এজেন্ট দিয়েছে দলটি।

গাইবান্ধা-৩ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন প্রত্যাহার করলেও ইসির ধারণা উপজেলায় বিএনপি অংশ নেবে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ মত ও পথকে বলেন, উপজেলা স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান। আমরা আশা করব এ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে।

সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে ইসি কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও গাইবান্ধা-৩ আসনে অংশ নেয়ায় আমরা ধারণা করছি এতেও বিএনপিসহ সবাই অংশ নেবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি ও এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা ও মে’র শেষদিকে রোজা বিবেচনায় মার্চ মাসে ভোটের উপযুক্ত সময় মনে করছি।

সর্বশেষ ২০১৪ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯৭টি উপজেলায় প্রথম ধাপে নির্বাচন হয়েছিল। ওই মাসের ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ১১৭টি উপজেলায় ভোট হয়। ওই বছর সব মিলিয়ে সাত ধাপে ভোট হয়। এবারও মার্চে দুই থেকে তিন ধাপের ভোট গ্রহণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন ইসির কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একটি পক্ষ জানায়, তারা মনে করছে একাদশ জাতীয় সংসদে দলের ভরাডুবির পর উপজেলায় কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে না বিএনপি। উপরন্তু নির্বাচনে অংশ নিলে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও হামলা দুই-ই বাড়বে।

এ ছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে দলের পক্ষ থেকে যে প্রচার চালানো হচ্ছে, সেটিরও গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না।

আরেক অংশ মনে করছে, মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা রাখতেই ভোটে অংশ নেয়া দরকার। অন্যথায় কর্মীদের মনোবল আরও ভেঙে পড়বে।

তাদের যুক্তি, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এটা প্রমাণ করতেই উপজেলায় অংশ নেয়া প্রয়োজন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে জাতীয় নির্বাচনের মতো এখানেও সরকারের হস্তক্ষেপ করবে। এতে মানুষের সামনে সরকারের আসল চেহারা বেরিয়ে আসবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হল। মানুষের আতঙ্ক এখনও কাটেনি। এ অবস্থায় আবার উপজেলা। সময় হোক তখন দেখা যাবে।

প্রসঙ্গত ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথমবার, ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বার ও ২০০৯ সালে তৃতীয়বারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর একইদিনে ৪৭৫টি উপজেলায় এ নির্বাচন হয়। ২০১৪ সালে ধাপে ধাপে উপজেলা নির্বাচন হয়।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে