মন্ত্রীর পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা প্রশাসনে রদবদলের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর বিভিন্ন দফতর, অধিদফতর ও পরিদফতরে গুরুত্বপূর্ণ পদ গ্রহণে আগ্রহীরা ইতিমধ্যেই লবিংয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। চলতি মাসের মধ্যেই এসব পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় বারের মতো সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা শপথ নেয়। গত এক দশক শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব চালিয়ে আসা নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন। শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নের চেষ্টায় শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের বিভিন্ন উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে। নতুন সরকারে সেই জায়গায় প্রধানমন্ত্রী নিয়ে এসেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনিকে, যিনি ২০০৯-২০১৪ মেয়াদের সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। চিকিত্সা ও আইনের ডিগ্রিধারী দীপু মনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় চালাতে তার রানিংমেট উপমন্ত্রী হিসেবে সঙ্গে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে নওফেল এমপি হয়েছেন এবারই প্রথম।
টানা ১০ বছরে দায়িত্ব পালন করা শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত অন্তত দুই শতাধিক কর্মকর্তা ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন দফতর-প্রতিষ্ঠানে লোভনীয় পদে আছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বছরের পর বছর একই পদে বহাল রয়েছেন। একই পদে ১০ বছর আছেন; এমন কর্মকর্তাও আছেন। একই পদে থাকায় কারো কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষা বিভাগের প্রশাসনিক কাজের কেন্দ্রবিন্দু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। মাউশির মহাপরিচালক পদে নিয়মিত পরিবর্তন আসে। কিন্তু কয়েকজন মুখচেনা কর্মকর্তা ঘুরে-ফিরেই পরিচালক ও উপপরিচালকসহ অন্য পদগুলোতে আছেন। মাউশির অনেক কর্মকর্তাই নানা অভিযোগে দুষ্ট।
এর বাইরে আছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর, আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, একটি মাদরাসা এবং একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এসব দফতরে ৩ থেকে ১০ বছর কর্মরত আছেন অনেক কর্মকর্তা। ঘুরে ফিরে একই চেহারার কর্মকর্তারা ঢাকায় বছরের পর বছর লোভনীয় পদ আঁকড়ে ধরে আছেন। বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী ও সরকারি অর্থায়নে চলছে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প।
শুরুতেই প্রশ্ন ফাঁস মুক্ত পাবলিক পরীক্ষা সম্পন্নের পরীক্ষায় পড়ছেন নতুন মন্ত্রী। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এতে ১২ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। ১০টি শিক্ষাবোর্ডের আন্তঃবোর্ড সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এই শিক্ষাবোর্ডের সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের নেতৃত্বে নিয়ন্ত্রিত হয় পুরো ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষায় গত ১০ বছরে বড় অঙ্কের প্রকল্প চলমান রয়েছে। বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে শুদ্ধি অভিযান শুরু হবে।
রাজধানীর সরকারি স্কুল ও কলেজে পদের অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলেও ঢাকার বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকের তীব্র সংকট রয়েছে। ঢাকায় বছরের পর বছর থাকা শিক্ষকরা বদলি আতঙ্কে আছেন। এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। এমপিও বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারের আশ্বাসে নির্বাচনের আগে আন্দোলন প্রত্যাহার করে বাড়ি ফিরে যান। প্রায় ৫ হাজার যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছেন। নতুন সহস াধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে।
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সবাইকে নিয়ে একযোগে কাজ করবেন। প্রধানমন্ত্রী যে বিশ্বাস ও আস্থা আমাদের ওপর রেখেছেন সেই বিশ্বাস ও আস্থার মর্যাদা রক্ষা করতে চেষ্টা করব, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব ।