সারা দেশে জোরদার হচ্ছে মাদকবিরোধী অভিযান। নতুন সরকার দুর্নীতি কিংবা সন্ত্রাসের মতো এবার মাদকের ক্ষেত্রেও জিরো টলারেন্স নীতির দিকে এগুচ্ছে।
গত ৩ জানুয়ারি সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ার পর সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সদস্যরা বৈঠকে বসেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে সেটা অব্যাহত রাখব। মাদক সমাজকে ভয়াবহভাবে ক্ষতি করছে। কাজেই যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নড়েচড়ে বসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কিছুটা শিথিল ছিল। দেশের কয়েকটি জেলায় নির্বাচনের নিরাপত্তার সুযোগে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকায় ফিরেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে অভিযান জোরদারের সঙ্গে সঙ্গে তারা ফের গা ঢাকা দিতে শুরু করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শীর্ষ মাদক কারবারী চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীদ রানা টিপুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এলাকায় ফিরে টিপু নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে গণসংযোগ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এদিকে গত সপ্তাহে ফেনী, কুমিল্লা ও মেহেরপুরে বন্দুকযুদ্ধে চার মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, গত এক বছরের মাদকবিরোধী অভিযানে ১ লাখ ১৫ হাজার মামলায় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ব্যবসায়ী ও সেবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত বছরের মে মাস থেকে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্ট গার্ডসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। র্যাব-পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সারা দেশে তিন শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। বিগত সরকারের অভিযানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সূত্র জানায়, নতুন বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রাজধানী ও ঢাকার বাইরে দুই শতাধিক মাদক মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে।
গত বুধবার রাতে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার মনা গ্রামে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ সাইফুল ইসলাম নামে তালিকাভুক্ত এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন।
এদিকে মেহেরপুর সদরের বুড়িপোতা সীমান্তে বৃহস্পতিবার মাদক কারবারীদের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে মুসাইদ হোসেন (৩৭) নামে একজন নিহত হয়েছেন।
২০১৮ সালের প্রথম ১১ মাসে পুলিশ ৯৩ হাজার ৭৪৭, র্যাব ৫ হাজার ৩৬৯, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ৬ হাজার ২৯০ এবং বিজিবি ১ হাজার ২৯১টি মামলা করে।
একই সময়ে পুলিশ ১ লাখ ২২ হাজার ৪৮২, র্যাব ৯ হাজার ৭৩৩, ডিএনসি ছয় হাজার ৬৪৮ এবং বিজিবি এক হাজার ৪১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। ১১ মাসে সারা দেশ থেকে তিন কোটি ৪৯ লাখ এক হাজার ৪৩৫ পিস ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। অভিযানে ৩ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে রক্ষা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান সব সময়ই জিরো টলারেন্স। এ লক্ষ্যে বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকবিরোধী অভিযান জিরো টলারেন্স নীতিতে চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা বিশেষ অভিযান অব্যাহত রেখেছি। নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি অন্যান্য কার্যক্রম চলছে।