বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আজ ১৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার মামলা করার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তা পিছিয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি এ মামলা করা হবে। নিউইয়র্কের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল কোর্টে সেখানকার প্রচলিত আইনে মামলা করা হবে।
এ বিষয়ে নিউইয়র্কের খ্যাতনামা দুটি ল’ ফার্মকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদ ইসলামের নেতৃত্বে মামলার প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি নিউইয়র্ক সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্ট ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসানও ছিলেন।
প্রসঙ্গত, কোনো কিছু হারিয়ে গেলে তা ফেরত পাওয়ার জন্য নিউইয়র্ক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল কোর্টে মামলা করতে হয়।
রিজার্ভ চুরির মামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (ফেড)-কে আসামি করা হবে কি না তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। সরকারের উচ্চ মহলে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। মামলাটি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে করার বাধ্যবাধকতা ছিল বলে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।
একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন কোন কারণে ১৫ জানুয়ারি মামলা করা না গেলে ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অবশ্যই মামলা করতে হবে। সে অনুযায়ী আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি মামলা করছে বাংলাদেশ।
ইতোমধ্যে মামলাটি করার জন্য নিউইয়র্কে দুটি ল’ ফার্মকে নিয়োগও দেওয়া হয়েছে। এই ল’ ফার্মের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধিদল সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ইতোমধ্যে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দেশটির আদালত দীর্ঘমেয়াদে দন্ডিত করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আসে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এখনও ফেরত আসেনি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে প্রধান আসামি করা হবে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংককে (আরসিবিসি)। দ্বিতীয় আসামি হিসেবে ফেডের নাম আলোচনায় থাকলে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ল’ ফার্মের আইনী মতামত অর্থমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে মামলায় আসামি হিসেবে ফেডের নাম থাকবে কী থাকবে না।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (ফেড) এবং ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এই মামলার প্রধান আসামি করা হবে রিজাল ব্যাংককে। এতে ফেডের নামও রাখা হবে।
এ মামলা কার কার বিরুদ্ধে হবে জানতে চাইলে সে সময় মুহিত বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (ফেড) এবং ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে হবে।
এর আগে গত নভেম্বর মাসে ফেডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। অর্থ উদ্ধারে তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ফেডের পক্ষ থেকে এ ধরনের আশ্বাস পাওয়ার ব্যাপারটি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কারণ, ফেডের মাধ্যমে চাহিদা মোতাবেক তথ্য পাওয়া গেলে মামলা কিংবা অর্থ উদ্ধারে প্রমাণ হিসেবে তা যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। তবে ফেডের বিরুদ্ধে মামলা করা হলে প্রতিষ্ঠানটি সহযোগিতার অবস্থান থেকে সরে আসবে কি-না তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তাদের মধ্যে দ্বিধা কাজ করছে। ফলে মামলায় ফেডের নাম থাকবে কি-না তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।