আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে গঠিত পর্যালোচনা কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগে। এই প্রতিবেদনের পরই জানা যাবে, কোন নীতি মেনে কোন ধরনের গ্রাহক আবাসিকে গ্যাস সংযোগ পাবেন। একইসঙ্গে এই পর্যালোচনা কমিটি এলএনজি (লিক্যুফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) ও এলপিজি (লিক্যুফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) গ্যাসের দামও নির্ধারণ করবে। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
পর্যালোচনা কমিটির প্রধান বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য মিজানুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা কয়েকদিন হলো কাজ শুরু করেছি। পর্যালোচনা শেষে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এলপিজি ও এলএনজির দামও পর্যালোচনা করে একটি মূল্য প্রস্তাব করব।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে সবপক্ষই একমত। তবে দেশজ গ্যাসের সংকটের মধ্যে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এলএনজি আমদানি ও রেশনিং করে বিভিন্ন খাতে গ্যাস সরবরাহ করার পরও দৈনিক গ্যাস ঘাটতি প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট। তবে আগামী মার্চ-এপ্রিলে সামিট গ্রুপের এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। সামিটের ভাসমান টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে।
কর্মকর্তারা জানান, কিছুদিন হলো দেশে এলএনজি গ্যাসের ব্যবহার শুরু হয়েছে। দেশজ গ্যাসের সঙ্গে এলএনজি মিশিয়ে পাইপলাইনে দেওয়ার কারণে গ্যাসের সার্বিক দাম বেড়ে গেছে। ব্যয়বহুল এ জ্বালানির ব্যবহার ধাপে ধাপে বাড়তে থাকবে। অন্যদিকে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প খাতে গ্যাসের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। গ্যাস সংকট সামলাতে দীর্ঘদিন ধরে গৃহস্থালীতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু সব এলাকায়ই আবাসিক গ্যাস সংযোগের দাবি তীব্র। বিতরণ সংস্থাগুলোয় অনেক আবেদন জমা পড়ে রয়েছে। অনেক জনপ্রতিনিধিও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে জনগণকে কথা দিয়েছেন। এরই প্রেক্ষাপটে আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার।
এছাড়া আবাসিকে এলপিজি ব্যবহারকে অনুপ্রাণিত করছে সরকার। তবে এর ওপর শতভাগ নির্ভরতা এখনই উপযুক্ত হবে না। এলপিজির ব্যবহার বৃদ্ধিতে ভারসাম্য রক্ষা করাও জরুরি। এ অবস্থায় আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে।
জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আবাসিকে কোন গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে, সেটি নিয়েই এখন পর্যালোচনা চলছে। ইতোমধ্যে ডিমান্ড নোট ইস্যু হয়ে গেছে। অর্থাৎ সংযোগের জন্য টাকা জমা দিয়ে অপেক্ষারত আবেদনকারীদের পাইপলাইনের গ্যাস দেওয়া হবে, না যেসব বহুতল ভবনে ইতোমধ্যে সংযোগ রয়েছে। কিন্তু ভবনের সম্প্রসারিত অংশ বা বর্ধিত ফ্লাটগুলোতে গ্যাস নেই, সেগুলোতেও সংযোগ দেওয়া হবে। কেই কেউ বলছেন, বর্তমান বিতরণ লাইনে সিস্টেম লস হচ্ছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ। শহরে বিতরণ লাইন সম্প্রসারণও ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বিষয় নিয়েই পর্যালোচনা করা হবে কমিটির কাজ। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিরও সুপারিশ করবেন তারা।
দেশে গ্যাসের সংকট, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন যুক্তিতে ২০১০ সালের মধ্য ভাগ থেকে আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রাখে সরকার। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কিছুদিনের জন্য শিথিল করা হলেও ২০১৫ সাল থেকে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে বৈধ আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৩৮ লাখ। এর মধ্যে ২৭ লাখ তিতাসের বিতরণ এলাকায়। বৈধ চাহিদাপত্র নিয়ে সংযোগের অপেক্ষায় আছেন প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক। এর মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার তিতাসের এলাকায়। অবৈধ গ্রাহক/সংযোগ আছে ৩ লাখের বেশি। এই গ্রাহকেরা গ্যাস ব্যবহার করলেও বিল পাচ্ছে না সরকার।