সরকার গঠনে চমক আসার পর এবার নবগঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের নেতৃত্বে চমক আসছে। সংসদীয় গঠনতন্ত্রের সূতিকাগার জাতীয় সংসদ পরিচালনায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ ভিভিআইপি পদগুলোতে নিয়ে আসছে নতুন মুখ। সংসদ উপনেতা থেকে শুরু করে চিফ হুইপ ও হুইপদের পদে ব্যাপক রদবদল অত্যাসন্ন। এ দিকে মহাজোটের শরিক হিসেবে নির্বাচন করলেও সরকারে অংশীদারিত্ব না নেয়া বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সংসদীয় দল পরিচালনায় নতুন নেতৃত্ব নিয়ে এসেছে। বিরোধীদলীয় নেতা থেকে শুরু করে সংসদের সব ক’টি পদে দশম সংসদে নেতৃত্বদানকারী কাউকেই স্থান দেয়নি দলটি। আর ছায়া মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত জাতীয় সংসদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলোতেও এবার নতুনরাই ঠাঁই পাচ্ছেন বলে জানা গেছে
নতুন সরকারে মন্ত্রীত্ব পাননি গত সরকারের এমন মন্ত্রীরা এসব কমিটিতে সভাপতির পদ পেতে পারেন। এ ছাড়া মন্ত্রীত্ব পাননি সিনিয়র এমপিরাও আসীন হতে পারেন সভাপতির আসনে। সবমিলিয়ে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ছাড়া নবগঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পদেই চলে আসছে পরিবর্তন।
আগামী ৩০ জানুয়ারি প্রথম অধিবেশন শুরুর মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সংসদে সরকার দলীয় উপনেতা, চিফ হুইপ ও হুইপ কারা হচ্ছেন তা নিয়ে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা হচ্ছে। এ ছাড়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে কারা থাকছেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনে কে আসছেন তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। অবশ্য বিরোধী দলীয় নেতা পদে এবার পরিবর্তন এসে গেছে এরই মধ্যে। জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ নিজেই এবার এই আসনে বসছেন। আর বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছেন স্পিকার। দলের চেয়ারম্যান এরশাদের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবের পর ওই স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে সরকারদলীয় উপনেতা নিয়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন। দশম জাতীয় সংসদে এ পদে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বয়সজনিত কারণে এবার তাকে বাদ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তার পরিবর্তে সাবেক শিল্প মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে এ আসনে বসানো হতে পারে। এ ছাড়া আট বারের এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নামও আলোচনায় আসছে। তবে উপনেতা পদে ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্পিকার পদে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীই থাকছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় রংপুরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পিকার হিসেবে আবারো ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে বেছে নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ কারণে ওই পদে আর কারো নাম শোনা যাচ্ছে না। দশম জাতীয় সংসদ পরিচালনায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীসহ সব দলের এমপিরাও তাকে পছন্দ করেন। তার এ ধরনের প্রহণযোগ্যতার কারণে স্পিকার হিসেবে অন্য কাউকে নিয়ে ভাবা হচ্ছে না।
সংসদের ডেপুটি স্পিকার পদে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করা অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি বহাল থাকতে পারেন। তাকে পরিবর্তন করা হলে এ পদে সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ ও সাবেক উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর নাম আলোচনায় আসছে। তবে এ পদে নতুন কাউকে নিয়োগ দিয়ে চমক দিতে পারেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদ পরিচালনায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ হচ্ছে সরকার দলীয় চিফ হুইপ। দশম জাতীয় সংসদে ওই পদে ছিলেন আ স ম ফিরোজ। এবার তার পদে অন্য কাউকে নির্বাচনের কথা বিবেচনা করছে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে সাবেক হুইপ নূরে আলম চৌধুরী ও ইকবালুর রহিমের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে হুইপ পদে সিনিয়রদের প্রাধান্য দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এ দিকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদটি অনেক এমপির কাছেই কাক্সিক্ষত। কারণ মন্ত্রণালয়গুলোকে এসব কমিটির কাছে জবাবদিহি করতে হয়। নবম ও দশম দুই সংসদে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত এসেছে কমিটির বৈঠকগুলো থেকে। আগের মতো এবারো কমিটিগুলোকে অধিকতর শক্তিশালী করা হবে বলে জানা গেছে। দশম সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এবারের মন্ত্রিসভায় এসেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন ড. আবদুুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক কমিটির সভাপতি ছিলেন দীপু মনি, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় বিষয়ক কমিটির সভাপতি ছিলেন হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি ছিলেন টিপু মুনশি, ডাক টেলিযোগাযোগের সভাপতি ছিলেন ইমরান আহমেদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন তাজুল ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন জাহিদ আহসান রাসেল। এবারের মন্ত্রিসভায় তারা সবাই স্থান পেয়েছেন। এবার স্থায়ী কমিটির বেশির ভাগ পদে সিনিয়রদের নির্বাচিত করা হবে। আর বেশ কিছু স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ দেয়া হবে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও শরিক দলগুলোর এমপিদের। আগামী ৩০ জানুয়ারি প্রথম অধিবেশনের আগেই এসব পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ একাই ২৫৭টি আসনে বিজয়ী হয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় দলটি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট পেয়েছে ৮টি আসন। বিএনপি এককভাবে পেয়েছে ৭টি। নির্বাচনে এককভাবে ২২টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়েছে জাতীয় পার্টি। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতরা ছাড়া বিজয়ী এমপিরা এরই মধ্যে শপথ নিয়েছেন। আগামী ৩০ জানুয়ারি প্রথম অধিবেশন শুরুর মাধ্যমে যাত্রা শুরু হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদের।