পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই বিশেষ এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে অল্প সময়ে শনাক্ত হবে যে কোনো মানুষের আসল পরিচয়। ফলে কোনো অপরাধী গ্রেফতার হয়ে ভুয়া নাম-ঠিকানায় পার পেতে পারবে না।
এ পদ্ধতি সহজেই সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঠিক পরিচয় শনাক্ত করতে পারবে। তাছাড়া এর মাধ্যমে মাত্র ৫ মিনিটে নাম-পরিচয়হীন লাশের পরিচয়ও শনাক্ত করা যাবে।
পুলিশ হত্যা, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন অপঘাতে মৃত্যু হওয়া মানুষের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। এ মর্গে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি অজ্ঞাতপরিচয় লাশ নিয়ে আসা হয়।সংশ্লিষ্টদের এসব লাশের পরিচয় শনাক্তে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।
শনাক্ত না হওয়ায় যেমন পরিবার তার খোঁজ পায় না, তেমনি উদ্ঘাটন হয় না মৃত্যুর রহস্য। এসব লাশ আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।
পিবিআই’র এ বিশেষ পদ্ধতি শতভাগ কার্যকর হলে আসবে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পরীক্ষামূলকভাবে এ প্রক্রিয়ায় পিবিআই বেশকিছু অজ্ঞাতপরিচয় লাশের পরিচয় শনাক্ত করেছে।
কেমন এই সফটওয়্যার : সফটওয়্যার সম্পর্কে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে দুই বছরের বেশি সময় লেগেছে। এ সফটওয়্যারটির মাধ্যমে অটো লাইভে পরিচয় শনাক্ত হয়।
তিনি বলেন, যার পরিচয় শনাক্ত প্রয়োজন, ওই সফটওয়্যারের মোবাইল ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারের মাধ্যমে প্রথমে তার দুই হাতের মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করা হয়। এটাকে আমরা লাইভ ফিঙ্গারপ্রিন্ট বলি। ফিঙ্গারপ্রিন্ট গ্রহণের পর ওই সফটওয়্যারটি তা কনভার্ট করে পিবিআই সদর দফতরে অবস্থিত ‘সেন্ট্রাল অ্যাপ্লিকেশন সার্ভারে’ প্রেরণ করে। পিবিআই সদর দফতর ল্যাব থেকে এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট অটো চলে যায় নির্বাচন কমিশনে রক্ষিত ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডাটাবেজে’। এরপর রিড করতে শুরু করে।
মুহূর্তেই খুঁজে বের করে ওই ব্যক্তির ছবি, ঠিকানাসহ সব তথ্য নিয়ে চলে আসে পিবিআই সদর দফতরের ল্যাবে। এখানে রেকর্ড জমা রেখে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যেখান থেকে পাঠানো হয়েছিল, সেখানে চলে যায়। জানিয়ে দেয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ হয়েছে। এভাবে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে আমরা কাজটা সারতে পারি।
তিনি বলেন, শুধু অশনাক্ত লাশই নয়, কোনো অপরাধী মিথ্যা পরিচয় দিলে তার সঠিক পরিচয় এ পদ্ধতিতে সঙ্গে সঙ্গেই নিশ্চিত হওয়া যায়।
পিবিআই ডিআইজি বলেন, আমরা পুলিশ সদর দফতরে চিঠি দিয়েছি। এ পদ্ধতি নিয়ে আরও কাজ এগোচ্ছে। শতভাগ কাজ সম্পন্নের পর আমরা তা দেশের সব জেলায় পিবিআই দফতরে দিয়ে দেব।
একটি ঘটনা : গত বছরের ২৯ অক্টোবর বিকালে ধানমণ্ডির সোবহানবাগে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশার ধাক্কায় আহত হন অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ নভেম্বর মারা যান তিনি।
এ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ওই নারীর আঙুলের ছাপ নিয়ে পিবিআই কর্মকর্তারা জানতে পারেন তার নাম সুফিয়া বেগম। বয়স ৫৫ বছর। বাড়ি কিশোরগঞ্জের হেমন্তগঞ্জের মিঠাইমনা গ্রামে। পরে খবর পেয়ে স্বজনরা তার লাশ বুঝে নেন।