এহসানুল ইয়াসিন, জন্ম : ২০ জানুয়ারি, ১৯৮২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া । প্রকাশিত গ্রন্থ : কবিতা : রাধিকা নগরীর দিকে হেঁটে যাচ্ছি, উত্তরাধিকারের হলফনামা, অহঙ্কারের গোপন চিঠি। গল্পগ্রন্থ : ফেরাও অথবা ভেঙে ফেলো
কন্যার প্রতি
জন্মদিন এলেই নিজের একাকিত্বের কথা মনে করো
মনে করো- মায়ের কথা।
তোমার জন্মের সময় মা একমুঠো স্বপ্নের বিনিময়ে
মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেছিল।
আর আমি?
হাসপাতালের বারান্দায় আলিঙ্গন করেছি
মূর্হুমুহু করতালি!
তোমার জন্মদিনে কাক ছাড়া একটা পাখিও গান ধরে নি।
তুমি হয়তো জানবেই না এ কথা কোনোদিন।কেননা,
তোমার জন্মের বহু আগেই এ শহরের বনদস্যুরা
ভূমিদস্যু হয়ে গিয়েছিল।
এমন অনেক বিষয় আছে-
যা তোমার মাকে জিজ্ঞেস করলেও হয়তো উত্তর পাবে না
কেবল মাকড়সার জালের মতো রহস্য বাড়বে।
সুতরাং এইসব কখনো জানতে চেও না।
যেমন জানতে চেও না
তোমার জন্মোৎসবে কারা এসেছিল?
কারা আসেনি?
শুধু মনে রেখো-
যারা এসেছিল সবাই তোমার স্বজন!
যারা আসেনি তারাও তোমার স্বজন!
জীবন ছোট্ট বলে কখনো আফসোস করো না
আফসোস করো না জীবন জটিল বলে
মনে রেখো-
সবকিছুকে ছাপিয়ে আনন্দটাই বড়কথা। আর
আর সবচেয়ে বড় কি জানো?
মানবিক মন!
কানা পয়সার হাট
চিতার উপর মিনারের মতো দাঁড়িয়ে আছে মঠ
নিজেরে বিক্রি করি
কানা পয়সার হাটে
পাশের গলিতে কারা যেন পানির দামে
ভাড়া দিচ্ছে শরীরের ওম
এমন কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না বহুকাল
যার কাছে নিজেকে সঁপে শুদ্ধ হব।
আজ হাটবার
আজ হাটবার। আগুন দামে হাট থেকে পাপ কিনতে যাব।
গাছের মতো হাটগুলোর শেকড় গজাচ্ছে। অন্ধকারে হাট,
আলোতে হাট। সব হাট ঘুরে দেখব। যদি পণ্যের
দেখা পাই কিনেও নিতে পারি। আজ হাটবার। আগুন দামে
হাট থেকে পাপ কিনতে যাব।
পবিত্রতা
গাঢ় অন্ধকার সঙ্গমের মতোই পবিত্র
এসো সঙ্গম করি
এসো পবিত্র হই
এসো আগুন গিলে পুরনো বটগাছ হই
যদিও পাতালে নেমে এসেছে ফেরাউনের ছায়া
তারপরও বলি
ঘাস ও গোবরই হচ্ছে
সময়ের নায়কদের খাবার
এসো সঙ্গম করি
এসো পবিত্র হই
এসো ঘাস ও গোবর খাই
নাম ধরে ডাকব
স্বপ্নের ভেতর ভোরের আযানের মতো বাঁক দেয় লাল মোরগ
আমি তখন আহত পাখির মতো ছটফট করে নাম ধরে ডাকি!
এত অনাহুত দুঃখ কোথায় রাখি? তেড়ে আসে শকুনের চোখ
ট্রাকভর্তি রাশি রাশি বেওয়ারিশ লাশের দ্রুতগামী কান্না।
কোথায় লুকাই এ আনতমুখ?
কেবল নাম ধরে ডাকি। যদি একবার মুখ তুলে তাকাও
বেঁচে যায় হাজার বছর দূরত্বের রাস্তা পারের কষ্ট
মুছে যাই রক্তের ক্ষত। যা কিনা গতকাল
রাজপথে ঝরিয়েছিল আমাদেরই বখে যাওয়া প্রিয় স্বজন।
একবার। শুধু একবার।
রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা
ছাতিম গাছটির মতো মানুষের ছায়াতলে দাঁড়াও
কৈশোরে প্রেমিকা হারানোর বেদনায় যে জজমিয়া
গভীরজলে মাছের মৈথুন দেখে
সে নিশ্চিত সংসারি হবার আশায় কন্যা দেখবে!
আর আমি?
প্রভুভক্তির মতো চিরদিন তোমার নাম ধরে ডাকব
হাওড়াগাছ তলে শিন্নি দেবো প্রতি মঙ্গলবার!
রাত্রির গান
০১.
অনাকাঙ্খিত শর্ত মেনে তোমার পাশে দাঁড়িয়েছি
বাইরে ভীষণ কুয়াশা। তুমি তখন ওমের মুরগীর মতো
শরীরে জড়িয়ে রেখেছ সবুজ রঙের খাম
কিংবা ধুলোমাখা হৃদয়।
কি পেয়েছো, কি পাওনি
মূর্খের মতো এসব খুঁজতে যাওয়া
কেবল বামনের কাজ
তারপরও অন্ধগলিতে রাতকানা মানুষ হাঁটে
দীর্ঘ হয় ছায়ার শরীর।
তুমি কি দেখতে পাও?
০২.
আলোর নাচনে নিজের সঙ্গে কেবল ভণিতা করা যায়
সব জানে রাত্রির দীঘল অন্ধকার।
কেন শুধু শুধু নিজের সঙ্গে যৌন যৌন খেলা?
জান তো আলোর শরীরে জড়িয়ে আছে যে গান
তা কেবলি উজ্জ্বল মুখের আহার! আর
অন্ধকার পথ মাড়িয়ে নতজানু হয় যে মুখ
সে গান করে বেলা অবেলার!
০৩.
কালো গাভীর পানানো ওলানের মতো
রাত ভারি হলে শুরু হয় জোনাকির কান্না!
বাবার চোখে তখন জিউল মাছের উজ্জ্বলতা
আর মা কেদে ওঠেন ডুকরে ডুকরে
উজ্জ্বলতা তার দুচোখের বিষ!
তুমি ঠিক তার বিপরীত
হংসযুগলের মৈথুন পরবর্তী সজিবতা নিয়ে
চুল বেণি করো
মুখের ওপর আলো-ছায়া
আর চোখের নীচে রাতের দীর্ঘশ্বাস।
তবুও আলো আসে আমাদের জীবনে
আসে অন্ধকার
কেবল মায়ের কান্না থামে না।
ও রাত তুমি কি এনে দিতে পার না
মায়ের জন্য আরেকটু অন্ধকার
কিংবা আনন্দগান।